অপরাধের আরেক নাম অনলাইন জুয়া, যেটি শহর থেকে গ্রাম সবখানে ছড়িয়ে পড়ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ্যে লোভনীয় বিজ্ঞাপন দিয়ে অনলাইন জুয়ার প্রতি যুবক ও তরুণদের আকৃষ্ট করা হচ্ছে। কোন কোন বিজ্ঞাপনে দেশের শীর্ষ ব্যক্তিদের ফেইক ভিডিও বা ছবি দিয়ে আকর্ষণের চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে অনেকেই সর্বস্বান্ত হচ্ছে, তেমনি ঘটছে নানা ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপরাধমূলক ঘটনা। প্রসঙ্গত, সম্প্রতি পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবরে জানা যাচ্ছে, সারাদেশে মাদকের মতো ছড়িয়ে পড়ছে অনলাইন জুয়া। অন্যদিকে, জুয়ায় আসক্তদের অধিকাংশই মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। মাদকের মতো অনলাইন জুয়ায় আসক্ত হয়ে পড়ছে বহু তরুণ। এমনকি জুয়ার টাকা জোগাড় করতে না পেরে আত্মহত্যা করার ঘটনাও ঘটছে। গতকাল বৃহস্পতিবার দৈনিক পূর্বদেশে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ আমাদের উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। লোহাগাড়ার কালাউজানে তিন তরুণ অনলাইন জুয়ার টাকা বন্টনকে কেন্দ্র করে হত্যাকান্ডের মত নিষ্টুর ঘটনা সংঘটিত করে। এরা পেশায় নির্মাণ শ্রমিক। নিহত তরুণের নাম মো. জাহেদ। জানা য়ায়, ১৪ জানুয়ারি উত্তর কালাউজানের রাবার ড্যাম এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ ঘটনার সাথে জড়িত দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছেন।
আমরা বলতে চাই, এমন জুয়া নিয়ে এমন পরিস্থিতি কতটা ভয়ানক বাস্তবতাকে স্পষ্ট করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সঙ্গত কারণেই জুয়া সংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে করণীয় নির্ধারণ ও তার যথাযথ বাস্তবায়নের বিকল্প নেই। তথ্য মতে, গত ছয় মাসে অনলাইন জুয়ার মাধ্যমে অর্ধ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে-যার মধ্যে অধিকাংশ টাকাই হুন্ডির মাধ্যমে পাচার হয়ে গেছে বলেও প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে। জানা যাচ্ছে, বিদেশ থেকে পরিচালিত হচ্ছে অনলাইন জুয়ার সাইটগুলো। আমরা জানি, গত বিশ্বকাপ ক্রিকেটের সময় অনলাইন জুয়ার রমরমা ব্যবসা শুরু হয়। ওই সময় গণমাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক লেখালেখি হওয়ার পর সরকার নড়ে উঠে। ওইসময় এক মাস্টারমাইন্ডসহ বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করা হয়। জানা যায়, বিপিএল শুরুর পর বিদেশ থেকে বাংলাদেশে অনলাইন জুয়ার অনেকগুলো সাইট পরিচালিত হওয়ার সুনির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া গেছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে সাইটগুলো এ দেশে পরিচালনার সঙ্গে জড়িতদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে শনাক্ত করা সম্ভব হওয়ার বিষয়টি সামনে এসেছে। আমরা বলতে চাই, অনলাইন জুয়া সংক্রান্ত যে বিষয়গুলো সামনে আসছে তা এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। কেননা, এমন পরিস্থিতি সন্দেহাতীতভাবেই ভীতিপ্রদ। ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতি আমলে নিয়ে সংশ্লিষ্টদের কর্তব্য হওয়া দরকার, কার্যকর পদক্ষেপ নিশ্চিত করা এবং আইনের প্রয়োগ ও সচেনতা বৃদ্ধির কার্যক্রমও অব্যাহত রাখা। বলা দরকার, এর আগে এমনটিও খবরের মাধ্যমে জানা গিয়েছিল যে, সারাদেশে অনলাইন জুয়াড়িদের বিশাল নেটওয়ার্ক আছে। প্রথম দিকে কৌতূহলের বশবর্তী হয়ে খেললেও শেষ পর্যন্ত জুয়ায় আসক্ত হওয়ার ঘটনাও ঘটছে। আসক্তরা ঘরে বসেই বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করে অনলাইনে দেশে ও বিদেশে জুয়া খেলছেন। ফলে সার্বিক বিষয়গুলোকে এড়ানোর কোনো সুযোগ নেই। আমরা বলতে চাই, দেশে সব ধরনের জুয়া আইনগতভাবে নিষিদ্ধ। ফলে অনলাইন জুয়ার প্রসার ঘটবে মানুষ আসক্ত হয়ে পড়বে এবং ঘটতে থাকবে নানা ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা- এটা গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
জানা যায়, অনলাইন জুয়ার সাথে জড়িত এমন বেশ কিছু সাইট ঢাকা, চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় রয়েছ্ েআইন-শৃঙ্খলাবাহিনী এগুলোর প্রতি কঠোর নজরদারি শুরু করেছে। সারাদেশেই তাদের নেটওয়ার্ক আছে। বিভিন্ন মোবাইল ব্যাংকিংয়ের এজেন্টরাও এই চক্রের সঙ্গে জড়িত।
আমরামনে করি, জুয়া সংক্রান্ত সার্বিক পরিস্থিতি আমলে নিতে হবে। এর আগে এটা জানা গিয়েছিল যে, শহরের ও গ্রামের নিম্ন আয়ের মানুষের অনেকেই লুডু খেলার অ্যাপস মোবাইল ফোনে ডাউনলোড করে টাকার বিনিময়ে জুয়া খেলছেন। আবার অনেকেই বাজি ধরে খেলছেন। এ ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের এই বিষয়টিও আমলে নেওয়া দরকার, বাজিও এক ধরনের জুয়া। যা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। আমরা আরোও মনে করি, যা আইনগতভাবে নিষিদ্ধ তা যদি ঘটতে থাকে তবে বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগের। ফলে আইনের প্রয়োগ যেমন ঘটাতে হবে, তেমনিভাবে সচেতনতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হতে হবে। জুয়ার কুফল সম্পর্কে প্রচার প্রচারণা চালাতে হবে। এবারে যাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিশ্চিত হোক। একইসঙ্গে অনলাইন জুয়া সংক্রান্ত সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ সাপেক্ষে সব ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্টরা তৎপর থাকবে এমনটি প্রত্যাশা।