অনগ্রসর অঞ্চলের শিক্ষার প্রসার : প্রসঙ্গ নাঙ্গল কোট

2

শামসুদ্দীন শিশির

ডাকাতিয়া বিধৌত উর্বর পলির সমতল অঞ্চল নাঙ্গল কোট। এক সময়ে ত্রিপুরা রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত বর্তমান কুমিল্লা জেলার নাঙ্গল কোট উপজেলা একটি অবহেলিত জনপদ। যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নয়ন অবহেলা ও শিক্ষায় অনগ্রসরতার প্রধান কারণ। এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল রেল। সেহেতু রেলপথের সুবিধা প্রাপ্তরাই ত্রিশ-চল্লিশের দশকে শহরে পড়াশোনা করার সুযোগ পেয়েছেন। উপজেলার মাঝ বরাবর চলে যাওয়া রেলপথে দুটো স্টেশন হাসান পুর এবং নাঙ্গল কোট। বৃটিশ সরকারের আমলে এদুটো স্টেশন আমাদের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এলো। আজও সমানভাবে রেলপথ সেই ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।
হিন্দু জমিদারদের উদ্যোগে ১৯১৬ সালে গোটা অঞ্চলের মানুষের সন্তানদের শিক্ষার আলো ছড়ানোর জন্য প্রতিষ্ঠিত হলো আমাদের প্রিয় বিদ্যালয় ময়ূরা হাই স্কুল। সুদীর্ঘ সময় পেরিয়ে ১৯৪১ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করলো নাঙ্গল কোট এ আর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয় (বর্তমানে মডেল সরকারি)। প্রাথমিক শিক্ষাও ১৯০০ শতকের শুরু থেকেই পাঠ কার্যক্রম শুরু করেছে। মাদ্রাসা শিক্ষায় এগিয়ে পাটোয়ার মাদ্রাসা, মৌকরা মাদ্রাসা, নাঙ্গল কোট মাদ্রাসা। উল্লেখ্য আমার পিতা মরহুম মীর আবু তাহের ময়ূরা হাই স্কুলের ছাত্র ছিলেন। ১৯৫৫ সালে ম্যাট্রিক পাস করেছেন এবং ১৯৬১ থেকে ১৯৭৯ সাল পর্যন্ত ঐতিহ্যবাহী ময়ূরা হাই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন।
আমাদের সময়ে যেসকল বরেণ্য শিক্ষক শতবর্ষী ময়ূরা হাই স্কুলের জাঁদরেল গুণী শিক্ষক ছিলেন তাঁদের মধ্যে রয়েছেন মোড্ডার হুজুর, কেরানি স্যার, হক স্যার, সুলতান স্যার, দেলু স্যার, অহিদ বি এস সি স্যার , আবু আহমেদ স্যার, তাহের স্যার ( আমার আব্বা), জয়নাল বি এস সি স্যার। , করিম স্যার আমরা ভর্তি হওয়ার কিছু দিন আগে মন্ত্রণালয়ে চাকরি নিয়ে চলে গেছেন।
নাঙ্গল কোট হাই স্কুলের শিক্ষক ছিলেন কাজী সাদেক স্যার, গফুর বিএসসি স্যার, টুয়ার হুজুর, হারুন বি এস সি স্যার, হারুন স্যার, রাজ্জাক স্যার, মাহবুব স্যার, কেরানি স্যার, রব বিএসসি এবং তাহের স্যার ( আব্বা) ১৯৮০ সালে নাঙ্গল কোট হাই স্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন।
আমদুয়ারের হুজুর মাওলানা হাশেম সাহেব দীর্ঘদিন পাটোয়ার মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ছিলেনএ সেই সময়ে শিক্ষকদের পাÐিত্য, আন্তরিকতা এবং পিতৃ সুলভ আচরণ শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনের অন্যতম প্রেরণা ছিল।
কালের প্রয়োজনে ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে দৌলখাঁড় হাই স্কুল, জোড্ডা হাই স্কুল, ভোলাইন হাই স্কুল, শাকতলী হাই স্কুল, বাঙ্গড্ডা হাই স্কুল উল্লেখযোগ্য।
নাঙ্গলকোট উপজেলায় প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত যেসকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে তন্মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা – ১৫১ টি, নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা – ০৩ টি, মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা – ৪৩ টি (০১টি সরকারিসহ), মহিলা কলেজ – ০১ (উপজেলা সদরে অবস্থিত), কলেজ – ০৫ টি (০১ টি সরকারিসহ), কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান-০৫টি। মাদ্রাসার সংখ্যা (বিভিন্ন ক্যাটাগরির; যেমন- দাখিল, আলিম,ফাযিল, কামিল, মহিলা ও এবতেদায়ী) ৫০টি, এছাড়াও বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) পরিচালিত স্কুল ২০০টিরও বেশি।
নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন শুরু হয়। শিক্ষার আলোর স্পর্শ পাওয়ার বাসনা এলাকার মানুষকে দোলা দিয়ে যায়। শুরু হয় গ্রাম ছেড়ে শহরে যাওয়া। শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়ে উপজেলা জুড়ে। উপজেলার প্রায় সব গ্রামের ছেলে মেয়েরা দেশের চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, সাধারণ বিশ্ববিদ্যালয়, কারিগরি শিক্ষা নানাভাবে নতুন পথ বিনির্মাণ করে ছুটে চলে চলছে দেশ এবং দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশ বিভূঁইয়ে।
তবে এটা অপ্রতুল। আমাদের ভাই-বোনদের, ছেলে মেয়েদের শিক্ষার আলো দিয়ে পৃথিবী জয় করার অঙ্গীকার করতে হবে। এবং পৃথিবীকে জয় করতে হবে। আমাদের অনুপ্রেরণা হিসেবে, আলোকবর্তিকা
হিসেবে ধ্রুব তারার মতো পথ দেখিয়েছেন যাঁরা, তাঁরা হলেন – প্রফেসর ড. কাজী জাকির হোসেন, প্রাক্তন অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ; মাস্টার মরহুম কলিম উল্লাহ ( আমাদের নানা) প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক, কুমিল্লা মডার্ণ স্কুল ; প্রফেসর ড. আবদুস সোবহান, প্রাক্তন অধ্যাপক, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়;
প্রফেসর ড. এমরান কবির চৌধুরী, প্রাক্তন উপাচার্য, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ; প্রফেসর রুহুল আমিন, লোক প্রশাসন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ; প্রফেসর সিদ্দিকুর রহমান , প্রাক্তন অধ্যক্ষ নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজ, লাকসাম, কুমিল্লা ;
প্রফেসর ড. মোশাররফ হোসেন, রসায়ন বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ; প্রফেসর ডা. শেখ আহমেদ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম ; প্রফেসর এ ওয়াই এম ওবায়দুল আকবর, প্রাক্তন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, চট্টগ্রাম ; মাওলানা মোস্তফা হামিদী,প্রাক্তন উপাধ্যক্ষ, শর্শিনা আলিয়া মাদ্রাসা; মাস্টার মীর আবু তাহের, প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত), নাঙ্গল কোট এ আর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, নাঙ্গল কোট, কুমিল্লা। অধ্যাপক বেলায়েত হোসেন, প্রাক্তন অধ্যাপক, ইংরেজি বিভাগ, ফেনী আলিয়া মাদ্রাসা ; প্রফেসর মোঃ আবু তাহের, প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান, ইসলামের ইতিহাস বিভাগ, সরকারি সিটি কলেজ, চট্টগ্রাম ; প্রফেসর রুহুল আমিন, প্রাক্তন অধ্যাপক, বাংলা বিভাগ, নবাব ফয়জুন্নেসা সরকারি কলেজ, লাকসাম, কুমিল্লা; মাওলানা আবুল হাশেম, প্রাক্তন অধ্যক্ষ, পাটোয়ার সিনিয়র মাদ্রাসা, নাঙ্গল কোট, কুমিল্লা; মোঃ আবদুল গফুর বিএসসি, প্রাক্তন প্রধান শিক্ষক, নাঙ্গল কোট এ আর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, নাঙ্গল কোট, কুমিল্লা, মুফতি আ ন ম ইব্রাহিম, পুশাই, ঢালুয়া; প্রমুখ।
বর্তমানে আমরা যেসব শিক্ষক দ্বারা প্রভাবিত, অনুপ্রাণিত- প্রফেসর রুহুল আমিন, প্রাক্তন চেয়ারম্যান, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লা ; প্রফেসর ড. মোঃ আবদুস সাত্তার মজুমদার, প্রাক্তন অধ্যক্ষ, বোয়ালমারী সরকারি কলেজ, ফরিদপুর (দাউদ পুর) ; প্রফেসর মোঃ রাশেদুজ্জামান, অধ্যক্ষ, নরসিংদী শিল্পাঞ্চল সরকারি কলেজ, নরসিংদী ( দাউদ পুর) ; জনাব ফিরোজ আহমেদ, উপাধ্যক্ষ, প্রেসিডেন্সি ইন্টারন্যাশনাল স্কুল এন্ড কলেজ, চট্টগ্রাম ( জোড়পুকুরিয়া); প্রফেসর মোঃ নুরুর রহমান, অধ্যক্ষ, কুমিল্লা সরকারি কলেজ, কুমিল্লা; ড. আকরামুল কবির, ক্রাইস্টচার্জ কলেজ, নিউজিল্যান্ড ; ড. শাহাদাত হোসেন কাউসার, সহযোগী অধ্যাপক ( রসায়ন) , কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা ( ধাতীশ্বর)।
প্রসঙ্গত নিচের কথাগুলো উপস্থাপন করছি।
নাঙ্গল কোট উপজেলা গঠনের গোড়ার কথা। নাঙ্গল কোট সাধারণ একটি ইউনিয়ন, একটি রেল স্টেশন, একটি হাই স্কুল এবং একটি বাজারকে ঘিরে গড়ে ওঠা জনপদ। ১৯৭৯ সাল এ অঞ্চলের মানুষের জন্য একটা স্মরণীয় সময়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ৭৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি নাঙ্গল কোট হাই স্কুলের মাঠে এক জনসভায় বক্তৃতা করছিলেন। হাজারো জনতার শ্লোগানে জিয়া ভাই থানা চাই প্রাঙ্গণ মুখোরিত। প্রেসিডেন্ট জিয়া বললেন, থানা বড় কিছু নয় আপনাদের থানা দিয়ে দিলাম। আনন্দে উদ্বেলিত মানুষ শ্লোগানে শ্লোগানে প্রকম্পিত করেছে চারদিক। লাকসাম থানা থেকে ৫ টি ইউনিয়ন এবং চৌদ্দগ্রাম থানা থেকে ৬ টি ইউনিয়ন মোট ১১টি ইউনিয়ন নিয়ে নাঙ্গল কোট থানা গঠিত। যুব মন্ত্রী আবুল কাশেম ১৯৮১ সালের ৩০ মে থানা উদ্বোধন করেন। উল্লেখ্য সেদিনই চট্টগ্রামে সার্কিট হাউজে একদল পথভ্রষ্ট সেনা কর্মকর্তার হাতে নৃশংসভাবে শহীদ হন। প্রেসিডেন্ট এর মৃত্যুর কারণে থানার কার্যক্রম দীর্ঘ সময় বন্ধ থাকে। ১৯৮৩ সালে নাঙ্গল কোট থানা আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু করে। ১৯৮৫ সালে মরহুম প্রেসিডেন্ট জেনারেল হোসাইন মোহাম্মদ এরশাদ বাংলাদেশের ৪৬০ টি থানাকে উপজেলায় উন্নীত করেন। নাঙ্গল কোট থানা এর একটি। উল্লেখ্য নাঙ্গল কোটের তিনজন শিক্ষকের শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এর বাসায় যাওয়ার অনুমতি ছিল ১. মরহুম মোখলেসুর রহমান চেয়ারম্যান, ২. আব্দুল গফুর বিএসসি ৩. মরহুম মীর আবু তাহের। কারণ এক সময়ে নাঙ্গল কোটে কোনো এস এস সি পরীক্ষার সেন্টার ছিল না। ১৯৮০ সালে শহীদ জিয়ার বিশেষ অনুমতিতে নাঙ্গল কোট হাই স্কুলে সর্ব প্রথম এস এস সি পরীক্ষার সেন্টার শুরু হয়। এস এস সির সেন্টার বিশেষ বিবেচনায় দেওয়ার পর পরবর্তীতে বোর্ডের পরামর্শে ১৯৮১ সালেও শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান এর নির্দেশে নাঙ্গল কোট হাই স্কুলে এস এস সি সেন্টার স্থায়ী হয়৷ এরপরই মেয়েদের শিক্ষার দ্বার উন্মোচিত হয়। এর আগে এ অঞ্চলের মেয়েরা পড়াশোনায় তেমন আগ্রহী ছিল না বিশেষত লাকসাম হাই স্কুলে গিয়ে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা রক্ষণশীল পরিবারগুলো চাইতেন না। ছেলেদের জন্যও বেশ ব্যয়বহুল ছিল। কারো পিতা উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে কেউ কেউ গরু-ছাগল বিক্রি করে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতেন। উল্লেখ্য ১৯৯২ সাল থেকে নাঙ্গল কোট হাসান মেমোরিয়াল কলেজে এইচএসসি পরীক্ষার সেন্টার আসে। এরপূর্বে নাঙ্গল কোটের শিক্ষার্থীরা গুনবতী কলেজে পরীক্ষা দিতেন।।
১৯৮৪ সালে মেয়েদের শিক্ষার মাইলফলক নাঙ্গল কোট বেগম জামিলা মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়।
বেগম শামীম আখতার ( আমাদের বড় খালাম্মা) , বি এ ( অনার্স) এম এ ( বাংলা) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ; বি এড ; (সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ, চট্টগ্রাম)প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ লাভ করেন।
এদিকে অনেকটা স্থবির হয়ে যাওয়া নাঙ্গল কোট হাসান মেমোরিয়াল কলেজ ( বর্তমানে সরকারি) চাঙা হয়। এরজন্য সবচেয়ে বেশি যাঁর অবদান তিনি হলেন প্রিয় শিক্ষক আবদুল গফুর বিএসসি । ১৯৮৪-৮৫ শিক্ষাবর্ষে কলেজে ভর্তি হন বেগম কায়নাত আখতার মুক্তা, রোল- ১। কলেজে মেয়েদের পড়াশোনা শুরু হয়। উল্লেখ্য বেগম শামীম আখতার স্কুল পরিচালনার পাশাপাশি বাংলা বিষয়ের গেস্ট শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। নাঙ্গল কোট এ আর বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, হাসান মেমোরিয়াল কলেজ, বেগম জামিলা মেমোরিয়াল বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মনোয়ারা – মাহমুদা মহিলা মাদ্রাসা, জামান কিন্ডারগার্টেনসহ আরো অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় অবদান রয়েছে খান পরিবারের। জনাব হাসানুজ্জামান খান ( প্রাক্তন এম এন এ) , তাঁর পুত্রগণ – জনাব এ কিউ এম শামসুজ্জামান খান, ডা. এ কিউ এম কামরুজ্জামান , এ কিউ এম রফিক উজ জামান, ইঞ্জিনিয়ার এ কিউ এম মাহবুব উজ জামান। খান পরিবারের সহযোগিতায় প্রতিষ্ঠিত প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় প্রচ্ছন্ন ভাবে থেকে দিনরাত খেটে যিনি কাজ করে গেছেন তিনি তাহের স্যার ( আমাদের আব্বা)। কালক্রমে নাঙ্গল কোট মাদ্রাসা, নাঙ্গল কোট মহিলা কলেজ, নাঙ্গল কোট কারিগরি কলেজ, নাঙ্গল কোট কারিগরি স্কুল প্রতিষ্ঠিত হয়।। নাঙ্গল কোট কারিগরি কলেজ ও কারিগরি স্কুল প্রতিষ্ঠায় সায়েম মাহবুব এর অবদান অনস্বীকার্য।
স্বাধীনতা উত্তর -পূর্ব সময়ে বৃহত্তর নাঙ্গল কোটে যেসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে তন্মধ্যে উল্লেখযোগ্যগুলো হলো – হেসাখাল হাই স্কুল, দায়েমছাতি হাইস্কুল, শাকতলী হাই স্কুল, ভোলাইন বাজার হাই স্কুল, মক্রবপুর হাই স্কুল, শাহেদাপুর হাই স্কুল, মনতলী হাই স্কুল, ঢালুয়া হাই স্কুল, জোড্ডা হাই স্কুল, বাইয়ারা হাই স্কুল এবং ধাতীশ্বর আহমেদ দেলোয়ারা স্কুল এÐ কলেজ (এই প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার পেছনে যাঁদের অবদান তাঁরা হলেন ধাতীশ্বর মিয়া বাড়ির ভূমির মালিকরা, মরহুম মীর আবু তাহের, মরহুম সায়েম মাহবুব, প্রফেসর মোঃ রাশেদুজ্জামানসহ এলাকার বিদ্যানুরাগী ব্যক্তিবর্গ যাঁদের আন্তরিক পরিশ্রম, বাঁশ বেতের যোগান স্কুল ঘরটি দাঁড়ানোর সাহস পেয়েছে)।
এরই ধারাবাহিকতায় নাঙ্গল কোটের বিভিন্ন অঞ্চলে গড়ে উঠছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। আমি আশা করি এক সময়ে শিক্ষায় পশ্চাৎপদ এ অঞ্চল এক দিন দেশের সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মডেল উপজেলায় পরিণত হবে। প্রয়োজন প্রতিজ্ঞা-শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখার, মানসম্মত শিক্ষক তৈরির জন্য ধারাবাহিক প্রশিক্ষণের আয়োজন , শিক্ষার্থীদের রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত রেখে স্বাপ্নিক আগামীর আলোকবর্তিকা হওয়ার পথ নির্দেশ করা। সামাজিক কলুষমুক্ত হয়ে অঞ্চলের নয়, দেশের নয়, দেশের গন্ডি পেরিয়ে পৃথিবীর যোগ্য মানুষে পরিণত হওয়ার। এক্ষেত্রে মা-বাবা, অভিভাবক, শিক্ষক, রাজনীতিবিদ, রাজনৈতিক কর্মী ও গোটা অঞ্চলের মানুষের ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ অনস্বীকার্য। প্রিয় পাঠক আপনাদের সকলের প্রতি অসীম শ্রদ্ধা। আমার এই লেখায় প্রেরণা যোগানোর জন্য চট্টগ্রামস্থ নাঙ্গল কোট সমিতির সদস্যদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। তথ্য দিয়ে লেখাটি সমৃদ্ধ করার জন্য প্রিয় অনুজ রেল কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জসীম এবং নাঙ্গল কোট উপজেলা একাডেমিক সুপার আনিস স্যারের প্রতিও আন্তরিক কৃতজ্ঞতা।

লেখক : শিক্ষাচিন্তক