মোহাম্মদ কুতুব উদ্দিন
জলদী হোসাইনিয়া কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সাবেক অধ্যক্ষ ওস্তাজুল আসাতিজা আল্লামা মুহাম্মাদ ফৌজুল কবীর রাহিমাহুল্লাহ চট্টগ্রাম জেলাধীন বাঁশখালী উপজেলার জলদী গ্রামের নেয়াজরপাড়ায় এক সম্ভ্রান্ত আলিম পরিবারে ১৯৩৫ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত ইসলামিক স্কলার আল্লামা হাফেজ আবুল হাছান রাহিমাহুল্লাহ ও তাঁর মহীয়সী মাতার নাম মরহুমা হাজেরা খাতুন। তাঁর দাদা মরহুম মাওলানা বরকত উল্লাহ ও নানা মরহুম মাওলানা আব্দুল কাদের উভয়ই উঁচু মানের আলিম ছিলেন। তিনি স্থানীয় মক্তব,জলদীস্থ মাখজানুল উলুম মাদরাসা,তৎকালীন নরসিংদী থানার কুমরাদি সিনিয়র মাদরাসা, বাঁশখালীস্থ পুইছড়ি ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা, দারুল উলুম আলিয়া মাদরাসা, ঢাকা আলিয়া মাদরাসা, ইসলামিক ইন্টারমিডিয়েট কলেজ,চট্টগ্রাম কলেজ, চট্টগ্রাম টিচার্স ট্রেনিং কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে (ডবল মাস্টার্স) প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা সমাপ্ত করেন। আলিম পরীক্ষায় ১২ তম স্থান অধিকার করে ১০ টাকা হারে সরকারিভাবে মাসিক বৃত্তি লাভ করেন। ফাজিল পরীক্ষায় সারা পূর্ব পাকিস্তানে ২৫ তম স্থান অর্জন করেন এবং মাসিক ২৫ টাকা হারে সরকারি বৃত্তি প্রাপ্ত হন। কামিল (মাস্টার্স) ফাইনাল পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে নবম স্থান অর্জন করেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য শিক্ষকগণের মধ্যে সরকারি মাদরাসা-ই আলিয়া ঢাকার হেড মুহাদ্দিস : মুফতী আমীমুল ইহসান মুজাদ্দেদী বরকতী রাহিমাহুল্লাহ,হাকীমুল উম্মাত আল্লামা আশরাফ আলী থানভী রাহিমাহুল্লাহ-এর খলীফা : জাফর আহমদ ওছমানী রাহিমাহুল্লাহ,ঢাকা আলিয়ার শায়খুল আদব : আব্দুর রহমান কাশগরী রাহিমাহুল্লাহ,দারুল উলুম আলিয়ার অধ্যক্ষ : উমার আহমদ ওছমানী রাহিমাহুল্লাহ,দারুল উলুম আলিয়ার দুই শায়খুল হাদীস যথাক্রমে আল্লামা মতিউর রহমান নিজামী ও আল্লামা মুফতী মুুুুুুহাম্মাদ আমীন রাহিমাহুমাল্লাহ ও শাহসূফী আল্লামা ইলাহী বখস রাহিমাহুল্লাহ (বাঁশখালী),আল্লামা শফীকুর রহমান রাহিমাহুল্লাহ (বড় হুজুর, বাঁশখালী) অন্যতম। কামিল উত্তীর্ণের পর জেলা প্রশাসকের উপস্থিতিতে ছহীহ বুখারী শরীফ পাঠ করার সাফল্যে মুগ্ধ হয়ে তৎকালীন জেলাপ্রশাসক তাঁকে দারুল উলুম মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে নিয়োগদান করেন। কর্মজীবনে তিনি সর্বোচ্চ দক্ষতা ও আন্তরিকতার সাথে পটিয়া রাহাত আলী মডেল উচ্চবিদ্যালয়,আখাউড়া রেলওয়ে সরকারি উচ্চবিদ্যালয়,পাহাড়তলী সরকারি উচ্চবিদ্যালয়,সল্টগোলা রেলওয়ে সরকারি উচ্চবিদ্যালয়,ইশ্বরদি নাজিমুদ্দিন হাইস্কুল,ময়মনসিংহ কেয়টখালি রেলওয়ে হাইস্কুল, চট্টগ্রাম নগরীর ছোবহানিয়া আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ, হাটহাজারী উপজেলা সদরের মূলকেন্দ্রে অবস্থিত অদুদিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসার অধ্যক্ষ,সাতকানিয়া উপজেলার গারাঙ্গিয়া আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষ, চট্টগ্রাম নগরীর সলিমা সিরাজ মহিলা ফাজিল (ডিগ্রি) মাদরাসা ও আল-আমীন বারিয়া কামিল মাদরাসার রেক্টর হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। উল্লেখ্য,মরহুমের অপর দুই ভাই যথাক্রমে অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মাদ রাহিমাহুল্লাহ ও অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান রাহিমাহুল্লাহও স্বীয় পিতার প্রতিষ্ঠিত জলদী হোসাইনিয়া কামিল মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও অধ্যক্ষ হিসেবে মাদরাসাটির সুনাম-সমৃদ্ধিতে আমৃত্যু যথাসাধ্য চেষ্টা করেছেন। বাংলাদেশে খুব কম পরিবারই থাকতে পারে, যে পরিবারে পিতা এবং একই পিতার তিনজন ছেলে ফাজিল-কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করেছেন। তাঁরই একজন ভাতিজা (মরহুম অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান-এর বড় ছেলে) জনাব কামরুল ইসলাম হোসাইনী বাঁশখালী পৌরসভার সফল প্রথম প্রশাসক ও মেয়র। জাতীয় ও স্থানীয়ভাবে এই গুণী ব্যক্তিত্বগণকে সম্মাননা প্রদান করা সময়ের অপরিহার্য দাবি। মহান আল্লাহ তাঁদেরকে উত্তম প্রতিদান দান করুন-আমীন। আমৃত্যু তিনি পর্যায়ক্রমে মাদরাসাটির সম্পাদক,সহ-সভাপতি ও অত্যন্ত দক্ষতা ও নিষ্ঠার সাথে সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন। তাঁর উল্লেখযোগ্য ছাত্রদের মধ্যে দারুল উলুম আলিয়া ও বায়তুশ শরফ আদর্শ কামিল (অনার্স-মাস্টার্স) মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ : প্রফেসর ড. সাইয়েদ আবু নোমান,ওয়াজেদিয়া আলিয়া মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ ও জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদরাসার মুহাদ্দিস : আল্লামা এনামুল হক, ছোবহানিয়া কামিল মাদরাসার সাবেক অধ্যক্ষ : আল্লামা মুছলেহ উদ্দীন,আল-আমিন বারিয়া কামিল মাদরাসার উপাধ্যক্ষ : আল্লামা আব্দুন নুর রাহিমাহুল্লাহ,ছোবহানিয়া কামিল মাদরাসার সাবেক মুহাদ্দিস : মাওলানা আনোয়ার হোছাইন, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদরাসার মুহাদ্দিস : মাওলানা দায়েম উল্লাহ রাহিমাহুল্লাহ,আহমদিয়া ডলমপীর সিনিয়র মাদরাসার সাবেক উপাধ্যক্ষ : মাওলানা এ টি এম বেদার আহমদ রাহিমাহুল্লাহ ও বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়ের সাবেক হেড মাওলানা : আছগর হোছাইন রাহিমাহুল্লাহ প্রমুখ অন্যতম। তিনি চট্টগ্রাম শহরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও জমিদার জনাব আব্দুল আজীজ সাহেবের কন্যা মুসলিমা খাতুনকে শাদি করেন। দাম্পত্যজীবনে তিনি দুই পুত্র ও দুই কন্যা সন্তানের জনক। মরহুমের ছোট ছেলে জনাব সাঈদুল আরেফীন একজন বিশিষ্ট লেখক,গবেষক ও দক্ষ সংগঠক। শিক্ষাকে ভালোবেসে নীরবে নিভৃতে প্রাসাদসম সুযোগগুলোকে সহজেই মাড়িয়ে সততার সাথে জীবনের শেষদিন পর্যন্ত অতিবাহিত করেছেন। ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত সদালাপী, খোশমেজাজি আলহাজ্ব মুহাম্মাদ ফৌজুল কবীর রাহিমাহুল্লাহ বাংলা,আরবী ,ফারসী, উর্দু ও ইংরেজি ভাষায় অগাধ পাÐিত্যের অধিকারী ব্যক্তিত্ব হিসেবে তৎকালীন আলিম ও শিক্ষিত সমাজের কাছে যথেষ্ট সমাদৃত ছিলেন। তিনি বাংলা,ইংরেজি,আরবী,উর্দু ও ফার্সীসহ একাধিক ভাষায় অনর্গল লিখতে ও বলতে যথেষ্ট পারদর্শী ছিলেন। একদা তিনি তাঁর শ্রদ্ধেয় পিতার কাছে উর্দু ভাষায় ফারসী লিপিতে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন যা মরহুমের ছোট ভাই অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা মোস্তাফিজুর রহমান রাহিমাহুল্লাহ-এর নিকট সংরক্ষিত ছিল। পত্রটি সম্পর্কে তাঁর জানাযায় চন্দনাইশস্থ বশরতনগর রশিদিয়া মাদরাসার মুহতামিম হাফেজ মাওলানা এমদাদ উল্লাহ সাহেব স্মৃতিচারণ করে বলেন:“হাল যামানার আলিমদের পত্রটি পড়তে কষ্ট হয়েছে।”এ থেকেই বুঝা যায় তাঁর জ্ঞানের গভীরতা কতটুকু। সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী জনাব এহছানুল হক মিলনকে পাবলিক পরীক্ষায় নকল প্রতিরোধের জন্যে ইংরেজিতে প্রাঞ্জল ভাষায় একটি স্মারকলিপি প্রেরণ করেন। মন্ত্রী মহোদয় স্মারকলিপিটি পেয়ে তাঁর ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং পাবলিক পরীক্ষায় সারা বাংলাদেশে নকলের কবর রচিত করে নকলমুক্ত পরীক্ষা উপহার দেন। ক্লাসে তিনি চক-ডাস্টার ব্যবহারের প্রতি গুরুত্বারোপ করতেন, নিজেও ক্লাসে চক-ডাস্টার ব্যবহার করতেন এবং বলতেন,“চক-ডাস্টার ব্যবহার ছাড়া ক্লাস পরিপূর্ণ হয় না।” কেবল শিক্ষাবিস্তারেই নয়; কুরআন-হাদীস নিয়ে নিয়মিত গবেষণারত ও যথেষ্ট ছহীহ চিন্তাধারার মানুষ হিসেবে ব্যক্তি জীবনে কোনোদিন কারো সাথে আপস করেন নি। ব্যক্তিজীবনে জ্ঞানের আলোকবর্তিকা ছড়িয়ে দিয়ে দেশবিদেশে প্রচুর ছাত্রছাত্রী ও অসংখ্য গুণগ্রাহী ভক্ত ও অনুরক্ত সৃষ্টি করেছেন। শিশুসুলভ মানসিকতায় আচ্ছন্ন থেকে আজীবন মানুষ গড়ার কারিগর হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে তিনি দৈনিক আজাদী, দৈনিক আজাদ, দৈনিক নয়াবাংলা এবং এক সময়কার দৈনিক দেশের কথা সম্পাদক মোসলেম খানের অনুরোধে নিয়মিত ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, শিক্ষা, দেশগঠন সামাজিক উন্নয়নমূলক বিভিন্ন নিবন্ধ-প্রবন্ধ লিখতেন। তাঁর বিশ্লেষণধর্মী কলামগুলো সে সময়ে বেশ পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। প্রকৃত ইসলামী দর্শন, উদারনৈতিক ভাবাদর্শ, দেশমাতৃকার প্রতি অসম্ভব দরদ, ন্যায়পরায়ণতা, নীতি ও অবিচল আদর্শের কারণে ব্যক্তিজীবনে খুবই আপসহীন মনোবৃত্তিতে মৃত্যুর শেষ দিন পর্যন্ত অটুট ছিলেন। ব্যক্তিজীবনে ইসলামিক পরিমন্ডলে ব্যাপৃত থাকলেও তিনি ছিলেন বিজ্ঞানমনস্ক, মুক্তবুদ্ধি চর্চা ও প্রগতিশীল চিন্তাসম্পন্ন একজন ব্যক্তিত্ব। আল্লামা ফৌজুল কবীর রাহিমাহুল্লাহ কুমিল্লা ও মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে বিভিন্ন সময়ে ইংরেজি,আরবী ও ইসলাম শিক্ষার প্রধান পরীক্ষক হিসেবেও গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেছেন। জীবনে তিনি দু’বার পবিত্র হজ্বব্রত পালন করেন। হজ্বব্রত পালনকালে তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ের বিখ্যাত কয়েকজন শিক্ষক ফারসী ভাষায় অগাধ পান্ডিত্যে মুগ্ধ হয়ে তাঁকে প্রচুর বইপুস্তক উপহার হিসেবে প্রদান করেন এবং তেহরান বিশ্ববিদ্যালয়ে আমন্ত্রণ জানান। এ ছাড়া তিনি কামিল পরীক্ষা সমাপনান্তে মিশরের আল-আজহার বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নের জন্য সরকারি অনুমতি পেয়েও বিভিন্ন সাংগঠনিক ও নিজস্ব কর্মব্যস্ততার কারণে তাঁর সেই স্বপ্ন সফল হতে পারে নি। তিনি বাঁশখালী ফাউন্ডেশনের আজীবন সদস্য ছিলেন। অসীম তেজি,জ্ঞানী ও সৎ সাহসের অধিকারী আল্লামা ফৌজুল কবীর রাহিমাহুল্লাহ জীবনের শেষ প্রান্তে এসেও যথেষ্ট আত্মপ্রত্যয়ী,স্বাধীনচেতা ও আত্মনির্ভরশীল হিসেবে শক্ত মনোবল নিয়ে চলাফেরা করতেন। তিনি কারো খিদমাত গ্রহণ করাকে অপছন্দ করতেন এবং কেউ তাঁর খিদমাত করতে চাইলেও বলতেন-“আল্লাহর কৃপায় আমি এখনো সক্ষম আছি।” তিনি সবমসময় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে স্বাচ্ছন্দবোধ করতেন এবং বাড়িঘর,আঙ্গিনা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও পরিচ্ছন্ন রাখতে সচেষ্ট ছিলেন। পরনির্ভরতাকে প্রচন্ড ঘৃণা করতেন। বাহ্যিক লোভ-লালসা ও চাহিদা তাঁকে কোনোদিন আচ্ছন্ন করতে পারে নি। বরাবরই তিনি সাদামাটা জীবনযাপনে অভ্যস্ত ছিলেন। তবে পোশাক-পরিচ্ছদে সবসময় পরিচ্ছন্ন, পরিশীলিত ও মার্জিত রুচির সাথে নিজেকে সুন্দরভাবে উপস্থাপনায় কখনো কার্পণ্য করেন নি। তিনি সবসময় ব্যক্তিত্ব (চবৎংড়হধষরঃু) নিয়ে চলাফেরা করতেন। গোজামিল অসচ্ছতাকে প্রচন্ড ঘৃণা করতেন এবং স্পষ্টবাদী একজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন। সাদা ধবধবে পাঞ্জাবী-পায়জামা ও টুপি পরিধান করতেন এবং মাঝেমধ্যে জিন্নাহ টুপিও পরিধান করতে দেখা যেতো। সময়ানুবর্তিতার প্রতি তিনি বিশেষ লক্ষ রাখতেন। যেকোনো সভা-সেমিনার ও বৈঠকাদিতে তিনি নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বেই পৌঁছে যেতেন। গভর্নিংবডির সভায় ডিসি কার্যালয়ে অন্য সদস্যদের আগেই পৌঁছে যেতেন। বিএড ডিগ্রি নেওয়ার সময় প্রাত্যহিক সমাবেশে বৃদ্ধ বয়সেও সবার আগে অধ্যক্ষ মহোদয়ের দৃষ্টি কেড়ে নিয়েছিলেন। তাই অধ্যক্ষ মহোদয় সমাবেশে বক্তব্য দেওয়ার সময় তাঁর প্রশংসা করে অন্য শিক্ষার্থীদেরকে বলতেন-“তিনি বৃদ্ধ বয়সেও আপনাদের আগে উপস্থিত হয়ে যান কিন্তু আপনারা বয়সে তাঁর চেয়ে অনেক কম হওয়া সত্তে¡ও যথাসময়ে উপস্থিত হতে পারেন না।” তিনি ভাইবোন ও আত্মীয়স্বজনের প্রতি খুবই আন্তরিক ছিলেন। তাঁর কোনো ভাই বা আত্মীয় তাঁকে না জানিয়ে চট্টগ্রাম শহরে গেলে তিনি খবর পাওয়া মাত্রই তাঁদের সন্ধানে বের হয়ে যেতেন এবং বাসায় নিয়ে এসে তিনি ও তাঁর স্ত্রী খুব আতিথেয়তা করতেন। তাঁর ভাতিজা জনাব কামরুল ইসলাম হোসাইনীকে চট্টগ্রাম কলেজে ভর্তি করার সময় সার্বিক দায়িত্ব পালন ও জনাব হেলালুল ইসলাম হোসাইনী চট্টগ্রামস্থ ছোবহানিয়া মাদরাসা থেকে কামিল পরীক্ষা তাঁর বাসায় থেকে দেওয়াকালীন পরীক্ষার হল থেকে না আসা পর্যন্ত তিনি ও তাঁর স্ত্রী একসাথে দুপুরের খাবার খাওয়ার জন্য বসে থাকতেন।
প্রখ্যাত শিক্ষাবিদ আলহাজ্ব আল্লামা মুহাম্মাদ ফৌজুল কবীর রাহিমাহুল্লাহ গত ৩০ মার্চ ২০২৪, ১৯ রমজান দিবাগত রাত ১২.১৫ টায় বলুয়ারদিঘির পূর্বপাড়স্থ শহরের নিজ বাসভবনে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। সেদিনই বাঁশখালী উপজেলাস্থ তদীয় পিতার প্রতিষ্ঠিত জলদী হোসাইনিয়া কামিল (স্নাতকোত্তর) মাদরাসায় সালাতুল জানাযা শেষে নেয়াজরপাড়া নবী জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে পিতামাতার কবরের পাশেই বহুগুণান্বিত এই আলিমকে সমাহিত করা হয়। মরহুমের সালাতুল জানাযায় জনপ্রতিনিধি,রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান,বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষক,কর্মচারী,ছাত্র,এলাকার বিভিন্ন গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গসহ অগণিত মুসল্লী উপস্থিত ছিলেন। মহান আল্লাহ তাঁর যাবতীয় ভুলত্রুটি ক্ষমা করে তাঁকে যেন জান্নাতুল ফিরদাউসের মেহমান বানিয়ে নেন,মুনীবের দরবারে এটাই একমাত্র কামনা-আমীন।
লেখক : প্রভাষক (আরবী), জলদী হোসাইনিয়া
কামিল (¯œাতকোত্তর) মাদরাসা,বাঁশখালী,চট্টগ্রাম