অদ্ভুত এক সুন্দর ঘ্রাণ পাই

1

রুমানা নাওয়ার

আমার শহুরে মা। যান্ত্রিক জীবনে বন্দি। এ ঘর ও ঘর করে দিন কাটে তাঁর। আর মানসচক্ষে বাড়িকে দেখতে পান। বাড়ি মানে আম্মার শ্বশুরবাড়ি। বাবার বাড়ির কথা তেমন বলেন না আর। স্বামীর বাড়িটা আমার মা র বাড়ি। শয়নে স্বপনে ঐ বাড়ির কথাই বলেন তিনি।একটা বাঙালি নারী বিয়ের পর শ্বশুরবাড়ি টাকে নিজের বলে জানে এবং মানে। এ যেন – মিছে আর সব। শ্বশুরবাড়ি ই সব।
আম্মা শহরের বাসায় নামায পড়েন কোরআন তেলাওয়াত, বই পড়ে আম্মার দিন কাটে।একদম রুটিন বাঁধা জীবন এখানে। শ্লথ ধীরে চলা জীবন।আর বাড়িতে আম্মা উদ্দাম অস্হির। বসে থাকার একদম জো নেই। খুঁজে খুঁজে কাজ বের করেন। ব্যস্তসমস্ত জীবন আম্মার। শরীরে না কুলোক। তবুও তার ফুরসত কই।বউ নাতিনাতনি ছেলে মেয়েদের আগলে রাখা জীবন আম্মার। একটু অদর্শনে উতলা হয়ে উঠেন। মন খারাপ করেন। আম্মার মায়ায় আমরা সবাই উপর নীচে ফ্ল্যাটে থাকি। আম্মার কাছাকাছি।আম্মা এ বাসা ও বাসা করেন। কোঁচড় ভরে মায়া বিলান আমাদের। আমরা তার সন্তানরা উন্মুখ থাকি আম্মার সেসব মায়ার জন্য। আম্মার নিটোল মুখটার জন্য। সুন্দর হাসিটার জন্য।পায়ের শব্দের জন্য।আর অদ্ভুত সুন্দর এক গন্ধের জন্য। দারুন এক সুঘ্রাণ আম্মার গায়ে, আম্মার শাড়ীতে। আমি বুক ভরে শ্বাস নিয়ে বুকে পুরে নিই সব সুঘ্রাণ।
গল্প করতে ভালোবাসেন ইদানীং। অতীতের সব গল্প। বাবা মা র গল্প। ভাই বোনের গল্প।জা দের গল্প আর আব্বার গল্প। আম্মার সব গল্পই সুন্দর। আমি শুনি মন দিয়ে। বাড়ির জন্য আম্মা হাহাকার করেন সবমসময়। দিনরাত আম্মার চোখজুড়ে থাকে বাড়িটা। বাড়ি থেকে ফিরেই আবার উন্মুখ থাকে কখন বাড়ি যাবে। এ একটা জায়গায় আম্মার ক্লান্তি নেই।বাড়ির উঠোন, কাপড় শুকানো র রশিটা, আকাশটা, দরজা জানালা ঘরের প্রতিটি আসবাব আম্মাকে ডাকে,আড়েআড়ে ডাকে। আম্মা উতলা হোন। আম্মা পিছনে হাত দুটি দিয়ে হাঁটেন বাড়ির এ মাথা ও মাথা। কাছারি উঠোন ফেলে বড় পুকুর অবধি হাঁটেন।পায়েপায়ে হাঁটেন মসজিদ যেখানটায়। কারণ আব্বা যে ঘুমিয়ে আছেন ওখানে। আহা শান্তি। আম্মার বুকজড়ে বেদনা।বুকজুড়ে শান্তি। দুটো পাশাপাশি বুকের ভিতর লালন করেন আমার মা। বাড়িটার পথেপথে ধূলিকণায় গাছের ছায়ায় ঝরা পাতাটাও আম্মার মায়ায় জড়ানো। এসবে জড়িয়ে থেকে কি সুখ। সে কেবল তিনিই জানেন।
লেখক : কবি ও গল্পকার