নিজস্ব প্রতিবেদক
চট্টগ্রাম কলেজের মাস্টার্সের ভর্তিতে ছাত্র-ছাত্রীদের ফরম পূরণ করার সময় নগরীর বিভিন্ন কলেজের চেয়ে হাজার টাকা বেশি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই অতিরিক্ত ফি’র বিষয়ে জানতে চাওয়ায় চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব ওমর ফারুক সাগরকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে। শুধু হুমকি নয়, ছাত্রদল নিয়েও বাজে মন্তব্য করেছেন তিনি। শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বলায় ছাত্রনেতাকে ‘সিঙ্গারা-ছমুছার পেছনে দৌঁড়ে বড় নেতা না হওয়ার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও রেকর্ড পূর্বদেশের হাতে রয়েছে।
ভিডিও রেকর্ডে দেখা যায়, চট্টগ্রাম কলেজের মাস্টার্স ভর্তিতে অতিরিক্ত ফি আদায়ের বিষয়ে জানতে চান ছাত্রদলের সদস্য সচিব ওমর ফারুক সাগর। জবাবে অধ্যক্ষ বলেন, এই টাকা কেন নিচ্ছি, সেটা প্রশ্ন না করে আমাদের এই স্টুডেন্ট কতজন সেটা আগে জানো। কোন কথা দায়িত্ব নিয়ে বলবা। আমাদের শিক্ষকদের বেতন ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত বাড়িয়েছি। আমার পিয়নের বেতন ছিল ১১ হাজার, তাকে করে দিয়েছি বিশ হাজার। টার্ম ফি আমরা একসঙ্গে নিচ্ছি।
এক পর্যায়ে মেজাজ হারিয়ে অধ্যক্ষ বলেন, “পন্ডিতগিরি ছাড়, জীবন এখনও অনেক বড়। এরকম পন্ডিতগিরি করলে ফুটপাতে পড়ে থাকবা, জীবনে কিছুই করতে পারবে না। পন্ডিতগিরি এক জিনিস, বাস্তবতা আরেক জিনিস। বেয়াদবি করিও না, বেয়াদব কোথাকার। পরিপত্রের বাইরে টাকা নেওয়ার আমাদের সুযোগ আছে? আমাদের কর্মচারী বেশি। অন্যান্য কলেজ মানবাধিকার লঙ্ঘন করে সাত হাজার, আট হাজার টাকা বেতন দিয়ে চাকরি করায়।”
তাই বলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের চাপ দিয়ে টাকা আদায় করবেন, এমন প্রশ্ন করায় আরও ক্ষিপ্ত হয়ে যান অধ্যক্ষ। তিনি বলেন, “সারা বছরে ১ হাজার টাকা বাড়তি দিলে এটা কিসের বাড়তি। যেই ছেলে টাকা দিতে পারবে না, তাদেরকে আমি পুওর ফান্ডে ভর্তি করাবো। বেয়াদবি কর, নেতাগিরি কর আমার সাথে। তোমাকে তো কলেজেও দেখা যায় না। বাইরে বাইরে ঘুরো, আর আমার সাথে নেতামি করো। তোমাকে কেউ নেতামি করতে বলে নাই, শিক্ষার্থীর জন্য দরদ উৎলাই পড়ছে তোমার। আমি ছাত্রদলকে বৈষম্য করি! ওরা মেজরিটি পারসন, আমি ওদের সাথে পারবো না। তোমার হেডাম থাকলে তুমি কর। ফালতু কথা বল এখানে, আমার কি করার আছে তোমার জন্য। হাজার হাজার টাকা বেতন দিতে হয় কর্মচারীদের, এজন্য সামান্য টাকা বাড়তি নিলে সমস্যা কি। আগে জ্ঞান অর্জন করো, যোগ্যতা অর্জন কর, পথে-ঘাটে লাথি খাবা। কোন মানুষ হবা না, আগে যোগ্যতা অর্জন করো। ছমুছা খাইয়া নেতা হইয়ো না। পিছে পিছে ঘুরে ফাইন্না নেতা হইও না।”
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের সদস্য সচিব ওমর ফারুক সাগর বলেন, নগরীর বিভিন্ন কলেজের তুলনায় চট্টগ্রাম কলেজে মাস্টার্সে ভর্তির ফি বেশি নেওয়া হচ্ছে। আগে ছাত্রলীগকে টাকা দেওয়া হতো, তাই বেশি নেওয়া হতো। অনেক শিক্ষার্থী আমাকে ফোনে বিষয়টি জানায়। শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগ পাওয়ার পর প্রিন্সিপালের সঙ্গে আমি কথা বলি। আমি কেন বিষয়টা নিয়ে জানতে চাইলাম, সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা বললাম; এ নিয়ে তিনি ক্ষিপ্ত হয়ে গেলেন। অকথ্য ভাষায় আমাকে গালিগালাজ করেন এবং প্রাণনাশের হুমকি দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোজাহেদুল ইসলাম চৌধুরী পূর্বদেশকে বলেন, মাস্টার্সের ভর্তিতে সরকারি পরিপত্রের বাইরে ফি নেওয়ার সুযোগ নেই। আমার চাহিদা বেশি। বেসরকারি কর্মচারী বেশি এবং তাদের বেতন কলেজ ফান্ড থেকে দিতে হয়। তাই অন্যান্য কলেজ ১১০০ টাকা বেশি নিচ্ছে, আমরা নিচ্ছি ১৫০০ টাকা। অর্থাৎ অন্যান্য কলেজ থেকে ৪০০ টাকা বেশি নিচ্ছি। আমরা নিচ্ছি একবার, যেখানে অন্য কলেজগুলো দুই বারে এই ফি আদায় করে। কোনো শিক্ষার্থী যদি বাড়তি ফি দিতে না পারে, তাহলে ‘পুওর ফান্ডে’ আবেদন করলে আমরা তাকে ভর্তি করাবো।
ফি’র বিষয়ে শিক্ষার্থীর সাথে মেজাজ হারানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তাকে বিষয়টি আগে হোয়াটসঅ্যাপে বুঝিয়ে দেওয়ার পরও সে আবার কল করে। তখন তাকে বলি, তুমি যে নেতা হইছো, মাথায় কিছু না থাকলে ভালো নেতা তো হইতে পারবে না। এরকম অনেক নেতা এখন দেখো না, কিছু বেইজ্জতির শিকার হয়, পথেঘাটে লাথি খায়। সবকিছু বুঝিয়ে বলার পরও শিক্ষার্থী দরদী সেজে যায়।’