অ কৃ ব নামেই তিনি সর্বত্র পরিচিত। তিনি মূলতঃ ব্যঙ্গ ও কৌতুক রস সাহিত্যিক হলেও জাদুবিদ্যা ও সঙ্গীতে তার বিশেষ পারদর্শিতা ছিল। বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ঢাকা কলেজ ও জগন্নাথ কলেজের অধ্যক্ষ কুঞ্জলাল নাগ ছিলেন তার মাতামহ। অজিত কৃষ্ণ বসুর জন্ম ৩ জুলাই, ১৯১২ সালে বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির বর্তমানে বাংলাদেশের ঢাকার গেন্ডারিয়ায়। পিতার নাম শৈলেন্দ্রমোহন বসু। অজিতকৃষ্ণের উচ্চ মাধ্যমিক পড়াশোনা ঢাকা শহরে। ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে আইএ; কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে ইংরাজীতে অনার্স সহ বি.এ. এবং প্রাইভেটে এম.এ. ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে। বিএ পড়ার সময়ই তিনি ‘আর্ট অভ পাবলিক স্পিকিং’ রচনা লিখে স্বর্ণ পদক লাভ করেন। প্রথম জীবনে অজিতকৃষ্ণ বিজ্ঞাপনকেই জীবিকা হিসাবে বেছে নেন। ১৯৩৯ খ্রিস্টাব্দে বিখ্যাত বৃটিশ কোম্পানি ডি জে কিমারে বিজ্ঞাপন বিজ্ঞানে শিক্ষানবিশি করেন। পরে ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দ হতে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বেঙ্গল ওয়াটার প্রুফ (ডাকব্যাক) কোম্পানির প্রচার কর্মকর্তা হিসাবে কাজ করেন এবং এই কাজে তিনি দেশে বিদেশে প্রভূত প্রশংসা পেয়েছিলেন। এর পর প্রায় আট বৎসর কোন বিশেষ প্রতিষ্ঠানে যুক্ত না থেকে ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে গোবরডাঙা কলেজে ইংরাজীর অধ্যাপক হিসাবে যোগ দেন। দু-বছর পর তিনি কলকাতার আশুতোষ কলেজে যোগ দেন এবং ১৯৭৭ খ্রিস্টাব্দের জুলাই মাসে অবসর গ্রহণ করেন।
অধ্যাপনাকালে আর্থিক অসচ্ছলতা ঘোচানোর লক্ষ্যে অনুবাদে আত্মনিয়োগ করেন। অবশ্য তার সাহিত্য জীবন শুরু হয়েছিল অনুবাদের মাধ্যমে। ১৯২৬ খ্রিস্টাব্দে মাত্র ১৪ বৎসর বয়সে টমার মুরের ‘দি লাইট অভ আদার ডে’ কবিতা অনুবাদ করেন; মুদ্রিত হয় ‘খোকাখুকি’ পত্রিকায়। তিনি সাহিত্য সঙ্গীত ও জাদু – এই তিন ক্ষেত্রে পারদর্শী ছিলেন। ব্যঙ্গ ও কৌতুকরসের কবিতা ও কৌতুকপ্রধান গল্প-উপন্যাস রচয়িতা হিসাবে বেশি পরিচিতি লাভ করেন। বিচিত্র ছন্দের ব্যবহার এবং তার সাথে কৌতুকরস ও দার্শনিক তত্তে¡র মিশ্রণে রচিত ‘পাগলা গারদের কবিতা’ তার অক্ষয় কীর্তি। খঁহধৎ ও খুৎরপং এর যুক্তরূপ খরহধৎরপং নামে পরিচিত আঙ্গিকে লেখা ‘ঝযধফড়ি রহ ঃযব ফধৎশ’ ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে প্রকাশিত তার উদ্ভট ও খাপছাড়া এমন ৪৫ টি ইংরাজী কবিতার অভিনব সংকলন। বোম্বে থেকে প্রকাশিত বিখ্যাত কার্টুন পত্রিকা ‘শঙ্করস্ উইকলি’ তে ইংরেজী কৌতুক কবিতা লিখেছেন।
ছোটবেলা থেকেই সঙ্গীতের প্রতি তার স্বাভাবিক আকর্ষণ ছিল। আট বৎসর বয়সে কণ্ঠসঙ্গীতে তালিম নিতে শুরু করেন। অন্ধগায়ক কৃষ্ণচন্দ্র দে র কাছে পরে ঢাকার উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত শিল্পী গুলমহম্মদ খাঁ ও সবশেষে সঙ্গীতাচার্য তারাপদ চক্রবর্তী র কাছে। ‘ওস্তাদ কাহিনী’ গ্রন্থে তিনি স্বীয় সঙ্গীত জীবনের কথা ও বহু বিশিষ্ট ওস্তাদের চমকপ্রদ কাহিনী বিবৃত করেছেন। তার প্রিয় ছাত্র অনুপ ঘোষালের ‘স্মৃতির স্মরণিকা’ নামের ক্যাসেটের প্রতিটি গান তার লেখা।
স্কুল জীবন থেকেই অ কৃ ব বন্ধু জাদুসম্রাট পি সি সরকারের (সিনিয়ার) সঙ্গে সমান্তরাল ভাবে জাদুচর্চ্চা করেছিলেন। কিন্তু মঞ্চে কখনো অবতীর্ণ হননি। তবে জাদুকরের বিচিত্র জীবন ও কৌতুহলোদ্দীপক ঘটনা নিয়ে লেখা তার ‘যাদুকাহিনী’ গ্রন্থটি ১৯৬৪ খ্রিস্টাব্দে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘নরসিংহদাস পুরস্কার’ পায়। ১৯৯৩ খ্রিস্টাব্দের ৭ মে তিনি ৮১ বৎসর বয়সে প্রয়াত হন। সূত্র: বাংলাপিডিয়া