শায়খ মুহাম্মদ মুহিউদ্দীন আযহারী
ইসলাম ধর্মে সুফিবাদ চর্চার দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় বহু তরিকা বিকাশ লাভ করে, যেমন: কাদেরীয়া, চিশতিয়া, সোহরাওয়ার্দীয়া, নকশ্বন্দীয়া, মুজাদ্দেদীয়া ইত্যাদি। তেমনি মাইজভান্ডারী তরিকাও কোরআন ও হাদিসের মৌলিক ভাবাদর্শের আলোকে আলোকিত একটি অধ্যাত্ম তরিকা। বাংলাদেশের সুফিবাদী অধ্যাত্ম সাধনার ইতিহাসে মাইজভান্ডারী তরিকা একটি বিশেষ অধ্যায়। গাউছুল আজম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক.) উনবিংশ শতাব্দির মধ্যভাগে চট্টগ্রামের মাইজভান্ডার নামক এক নিভৃত পল্লীগ্রামে মাইজভান্ডারী তরিকার প্রচারের সূচনা করেন। শতাব্দী ঊর্ধ্বকাল সময়ের গতিপ্রবাহে এই আধ্যাত্মিক তরিকার পরিচিতি ও দাওয়াত ভৌগলিক সীমারেখার সীমাবদ্ধতাকে জয় করে পুরো বিশ্বের অনুসন্ধিৎসু মানবদরদী মানুষের দোরগোঁড়ায় পৌঁছানোর সাথে সাথে বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান, পন্ডিত, গবেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণে সমর্থ হয়েছে। এই তরিকার আদর্শ ও শিক্ষা ব্যক্তি পর্যায় থেকে শুরু করে পারিবারিক, সামাজিক, রাষ্ট্রীয় ও আর্ন্তজাতিক পর্যায়েও শান্তি, সাম্য ও নৈতিকতার ভিত্তি সুদৃঢ করার স্বভাবজাত সামর্থ সংরক্ষণ করে। মাইজভান্ডারী তরিকার ইতিহাসে যে কজন ক্ষনজন্মা ব্যাক্তিত্ব এই তরিকার চলার পথকে সমৃদ্ধ করেছেন তাদের মধ্যে অছিয়ে গাউছুল আজম হযরত সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারী (ক.) শীর্ষস্থানীয়।
আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা, সত্যকে তুলে ধরার উদগ্র বাসনা, সময়োপযোগী নির্মোহ- বাহুল্য বর্জিত ও যুক্তিনির্ভর লেখনি শক্তি, মাইজভান্ডারী আদর্শের অনুসরণে গঠিত জীবানাচার, আপোষহীন নৈতিকতা ইত্যাদি দুর্লভ গুণের সমাহার এই প্রাগসর তত্ত্বজ্ঞানী হযরত সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারী (ক.)কে পরিণত করেছে মাইজভান্ডার বিষয়ক ভাবনা ও গবেষণার কেন্দ্রীয় চরিত্রে। সুদীর্ঘ জীবনের পুরোটাই মাইজভান্ডারী তরিকার প্রচার ও প্রসার এবং এই তরিকার তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ উপস্থাপন করে বিভ্রান্তি ও বিকৃতি অপনোদনের মাধ্যমে তরিকতের সঠিক আধ্যাত্মিক ধারা ও ধারণা জনসমাজে তুলে ধরার ক্ষেত্রে অগ্রণীতো বটেই অনেক ক্ষেত্রে একক ও কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেছেন।
জন্ম ও বংশ পরিচয় : হযরত সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারী (ক.) ২৭ ফেব্রুয়ারী ১৮৯৩ ইংরেজী, ১৩ ফাল্গুন, ১২৯৯ বাংলা জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা হযরত শাহ সুফি সৈয়দ ফয়জুল হক (ক.) (১৮৬৫-১৯০২)। তাঁর পিতামহ মাইজভান্ডারী তরিকার প্রতিষ্ঠাতা গাউছুল আজম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক.)।
শিক্ষা : তিনি পাঁচ বছর বয়সে পিতামহ হযরত গাউছুল আজম সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক.) এঁর কাছে প্রাথমিক শিক্ষা আরম্ভ করেন। তিনি তৎকালীন মোহছেনিয়া মাদ্রাসার শেষ পরীক্ষায় সফলতার সাথে উত্তীর্ণ হয়ে প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশুনার সমাপ্তি টানেন। তবে প্রাতিষ্ঠানিক গন্ডীর বাইরেও বিভিন্ন বিষয়ে তার ব্যাপক পড়াশুনা অব্যাহত রাখেন।
ওফাত : তিনি ১৯৮২ সালের ১৬ জানুয়ারি, ২ মাঘ ১৩৮৮, শনিবার ইন্তেকাল করেন। হযরত গাউছুল আজম (ক.) এর স্নেহ ও ভালবাসা : তাঁকে তাঁর দাদা গাউছুল আজম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক.) অত্যাধিক আদর করতেন। গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (ক.) আদর করে নাতীকে ‘দেলা ময়না’, ‘দাদা ময়না’, ‘ময়না পাখি’ ইত্যাদি বলে ডাকতেন। আধ্যাত্মিক জীবনের দীক্ষা ও উচ্চাসন : গাউছুল আজম হযরত সৈয়দ আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক.) ছিলেন তাঁর পীরে তরিকত। অন্যদিকে হযরত সৈয়দ গোলাম রহমান মাইজভান্ডারী (ক.) ছিলেন তাঁর পীরে তাফাইয়োজ। হযরত কেবলা ও বাবা ভান্ডারী এঁর ফয়েজের মিলনস্থল হিসেবে তিনি অনন্য আধ্যাত্মিক উচ্চাসনের অধিকারী।
তাঁর আধ্যাত্মিক উচ্চাসনের কথা হযরতের (ক.) রহস্যপূর্ণ বাক্যের মাধ্যমে প্রকাশ পেতো। যেমন : ‘নবাব হামারা দেলা ময়না হ্যায়, ফের আওর কোন নবাব হ্যায়?’ ‘তোম কওন সুলতান হ্যায়? সুলতান হামারা দেলা ময়না হ্যায়?’
আধ্যাত্মিক উত্তরাধিকার : হযরত গাউছুল আজম মাইজভান্ডারী (ক.) তাঁর ওফাতের পূর্বে পুত্রবংশীয় নাতী হযরত শাহ সুফি সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারীকে (ক.) স্বীয় গদীর একমাত্র উত্তরাধিকারী নির্ধারণ করে যান। তিনি বলেন, আমার ‘দেলাময়না’ বালেগ! দেলাময়নাই আমার গদীতে বসবে।
জাগতিক ও আধ্যাত্মিক খেদমত : হযরত সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারী (ক.) তাঁর উপর অর্পিত এই গাউছিয়ত ক্ষমতায় সাজ্জাদানশীন সাব্যস্ত হয়ে মাইজভান্ডারী পরিমন্ডলে আবির্ভূত হয়েছিলেন ব্যতিক্রমধর্মী মানবদরদী এক নতুন স্বত্তা নিয়ে। সব্যসাচীর মতো যুগপৎভাবে রূহানি হেদায়ত আর মানবতার কল্যাণে নিয়োজিত অছিয়ে গাউছুল আজম স্থাপন করেছিলেন আর্ত-মানবতার সেবার এক অনন্য দৃষ্টান্ত। তিনি ভক্ত-মুরিদদের নিয়মিত আধ্যাত্মিক তালকীন-তালীম দিতেন। তাঁর ভক্ত-মুরিদদের মাঝে অনেকেই বুযুর্গী লাভ করেছিলেন। তাঁর বড় ছেলে হযরত শাহ সুফি শাহানশাহ সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভান্ডারী (ক.) এঁর বুযুর্গী ও অলৌকিকত্ব কিংবদন্তির পর্যায়ে পৌঁছেছিল।
তরিকতের কর্মকান্ডের পাশাপাশি স্কুল-মাদ্রাসা-লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠা, ট্রেনের যাত্রীদের সুবিধার্থে স্থায়ী শেড নির্মাণ, পোস্ট অফিস স্থাপন, মাইজভান্ডার শরীফ ও তৎসংলগ্ন এলাকার উন্নয়ন ও বিদ্যুতায়ন, কৃষক কল্যাণের নিমিত্ত ‘সর্ত্তা লেলাং প্রবাহন এলাকা কৃষি সমিতি’ ইত্যাদি সমাজ সেবামূলক কাজ তাঁর প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালিত হয় । ১৯৪৩ সালে দুর্ভিক্ষের সময় তিনি নানুপুর, লেলাং প্রভৃতি ইউনিয়নের দুর্গত লোকদের জন্য কিচেন কমিটি গঠন করে খাদ্য বিতরণ করেন। অনেক অনাথ বালক-বালিকা ও ভবঘুরে তার আস্তানায় লালিত-পালিত ও শিক্ষা প্রাপ্ত হয়ে জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
মাইজভান্ডারী তরিকার আধ্যাত্মিক ধারাবাহিকতা রক্ষা : হযরত সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারী (ক.) পীর হওয়ার জন্য খেলাফতপ্রাপ্ত হওয়ার শর্তের প্রবক্তা ছিলেন। তাঁর দৃষ্টিতে যে ব্যক্তি আপন পীর সাহেবের কাছ থেকে সরাসরি ও স্পষ্টভাবে খেলাফত পাননি তিনি কোনভাবেই অন্য কাউকে বায়াত দেয়ার যোগ্য নন। খেলাফত প্রদানপূর্বক সাজ্জাদানশীন মনোনয়নের মাধ্যমে গাউছিয়ত জারি রাখার নিয়মের অনুসরণে হযরত শাহ সুফি সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারীও (ক.) তাঁর জীবিতাবস্থায় তদীয় তৃতীয় পুত্র হযরত শাহ সুফি সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভান্ডারীকে (ম.) নিজ গদীর উত্তরাধিকারী ও দরবারে গাউছুল আজমের সাজ্জাদানশীন সাব্যস্ত করে যান। তিনি শাহ সুফি সৈয়দ এমদাদুল হক মাইজভান্ডারীকে (ম.)কে সাজ্জাদানশীনের দায়িত্ব অর্পণের বিষয়টি জরুরি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ও তাঁর লিখিত ‘মানব সভ্যতা’ নামক বইয়ের ভূমিকাংশে উল্লেখের মাধ্যমে প্রামাণ্যকরণ করেন।
তিনি জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে বলেন, ‘সৈয়দ এমদাদুল হক হানফী মজহাব সুন্নতে এজমা বিধি ফতোয়া মতে আমার মনোনীত সাজ্জাদানশীন সাব্যস্ত। এতদসঙ্গে আমি ঘোষণা করিতেছি যে, আমার অবর্তমানে হজরতের হুজুরা শরীফে আমার গদীর উত্তরাধিকারী বর্তমান নায়েব সাজ্জাদানশীন সৈয়দ এমদাদুল হককে আমি মনোনীত করে আমার স্থলাভিষিক্ত করিলাম। শিক্ষা দীক্ষা শজরা দান এবং ফতুহাত নিয়ন্ত্রণ অধিকার সম্পন্ন, এই গাউছিয়ত জারী-সফলতাদানকারী সাব্যস্ত করিলাম।’
‘মানব সভ্যতা’ বইয়ের ভূমিকাংশে তিনি উল্লেখ করেন, অত্র বইটি আমার জীবন সায়াহ্নে ছাপাইয়া যাইতে পারিব কিনা ভবিতব্য খোদাই তাহা ভালো জানেন। তাই বইটি ছাপাইবার জন্য আমাদের প্রচলিত ‘আঞ্জুমানে মোত্তাবেয়ীনে গাউছে মাইজভান্ডারী’ সমাজ-সংস্কার ও নৈতিক উন্নয়নমূলক সমাজ সংগঠক পদ্ধতির সফলতার উদ্দেশ্যে হানেফী মজহাব এজমা ফতোয়ার ভিত্তিতে আমি যেইভাবে কামেল অলীউল্লাহর নির্দেশিত উত্তরাধিকারী গদীর সাজ্জাদানশীন সাব্যস্ত তদ্মতে আমার ছেলেদের মধ্যে যোগ্যতম ব্যক্তি সৈয়দ এমদাদুল হক মিঞাকে ‘সাজ্জাদানশীন’ মনোনীত করিবার পর এই গ্রন্থটি তাহার হস্তে অর্পণ করিলাম।
ঐতিহাসিক বিশেষত্ব ও ‘অছীয়ে গাউছুল আজম’ : তাঁর সবচেয়ে বড় ঐতিহাসিক বিশেষত্ব এই যে, তিনি মাইজভান্ডারী তরিকার প্রবর্তক গাউছুল আজম হযরত আহমদ উল্লাহ মাইজভান্ডারী (ক.) এঁর জাগতিক বংশধারা ও আধ্যাত্মিক ‘গাউছিয়ত’ এর একক উত্তরাধিকারীত্বের সম্মান, ক্ষমতা ও দায়িত্বের অধিকারী ছিলেন। এই অনন্য জাগতিক ও আধ্যাত্মিক বিশেষত্বের শীর্ষ শিখরে অবস্থান করে তিনি আশেক ভক্তদের মাঝে ‘অছিয়ে গাউছুল আজম’ হিসেবে পরিচয় লাভ করেন। বস্তুতঃ একবিংশ শতাব্দী বা তৎপরবর্তী সময়ের গবেষকদের জন্য ঊনিশ শতকের মধ্যভাগে প্রতিষ্ঠিত ও প্রচারিত মাইজভান্ডারী তরিকার স্বরূপ ও তাত্তি¡ক উপলব্ধিতে হযরত সৈয়দ দেলাওর হোসাইন মাইজভান্ডারীই (ক.) মূল মাধ্যম ও উৎস।
মাইজভান্ডারী তরিকার তাত্ত্বিক বিশ্লেষক : তিনি প্রথম পরিকল্পিতভাবে ও একাডেমিক নির্মোহ দৃষ্টিতে মাইজভান্ডারী তরিকার মৌলিক ভাবাদর্শ ও বৈশিষ্ট্যাবলী বিশ্লেষণ ও উপস্থাপনের প্রয়াস নেন। এই কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে তিনি ছোট-বড় ১০ টি গ্রন্থ রচনা ও সম্পাদনা করেন।
লেখনির মাধ্যমে মাইজভান্ডারী তরিকার তত্ত্ব ও তথ্য উপস্থাপনের প্রারম্ভিক কথন হিসেবে তাঁর বক্তব্য ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে সবিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। তিনি বলেন, ‘… আমি হুজুরে আক্দাছ হজরত শাহছুফী মওলানা সৈয়দ আহমদ উল্লাহ (ক.) ছাহেবের অনুগ্রহ ও খেদমত ছোহবতের ফয়জ বরকত প্রাপ্ত এবং প্রত্যক্ষ দর্শনের অধিকারী বংশধর তাঁহার একমাত্র পুত্র সন্তান মওলানা সৈয়দ ফয়জুল হক মরহুম শাহ ছাহেবের একমাত্র বিদ্যমান পুত্র এবং হজরত আক্দাছের সাজ্জাদানশীন বিধায় নৈতিক দিক্ দিয়া এই বেলায়তের স্বরূপ উদঘাটন রূপ দুঃসাহসী কাজে মনোনিবেশ করিতে বাধ্য হইলাম।’
তাঁর প্রকাশিত রচনা ও সম্পাদনাবলীর সংখ্যা মোট ১০ টি। যথা:- ১. গাউছুল আজম মাইজভান্ডারীর জীবনী ও কেরামত, ২. বেলায়তে মোতলাকা, ৩. গঠনতন্ত্র, ৪. প্রতিবাদ লিপি, ৫. এলাকার রেনেসাঁ যুগের একটি দিক, ৬. বিশ্ব মানবতায় বেলায়তের স্বরূপ, ৭. মানব সভ্যতা, ৮. মিলাদে নববী ও তাওয়াল্লোদে গাউছিয়া, ৯. মুসলিম আচার ধর্ম, ১০. মূল তত্ত্ব বা তজকীয়ায়ে মোখাতাছার (১ম খন্ড)।
মাইজভান্ডারী তরিকার আদর্শ প্রচারে সাংগঠনিক ভিত্তি : মাইজভান্ডারী তরিকার প্রচার ও দাওয়াতী কার্যক্রমের উদ্দেশ্যে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন ‘আঞ্জুমানে মোত্তাবেয়ীনে গাউছে মাইজভান্ডারী’। তিনি পীরী ছায়র বা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুরিদ করানো ও হাদিয়া গ্রহণ করার প্রথার বিরুদ্ধে ছিলেন। তাঁর মতে ‘মানুষ পরিষ্কার হওয়ার জন্য পুকুরে যায়। পুকুর মানুষের কাছে আসেনা’।
নির্বিলাস জীবনাচার ও খাদেমুল ফোকরা : ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী ও নির্বিলাস জীবন-যাপনে অভ্যস্ত। নিজের পরিচয় দেয়ার সময় তিনি অতি বিনয়ে বলতেন খাদেমুল ফোকরা বা আল্লাহর ফকিরদের সেবক। ওফাতের পরও তিনি তাঁর বিনয়ী ও নির্বিলাস সুফি দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় রেখে গেছেন। তিনি তাঁর জন্য মাজার না করার এবং আলাদাভাবে কোন ওরশ করার জন্য ওসিয়ত করে যান। তাঁর এই অছিয়তের প্রতি সম্মান প্রদর্শনপূর্বক তাঁর কোন মাজার নির্মাণ করা হয়নি এবং তাঁর জন্য আলাদা কোন ওরশের আয়োজনও করা হয়না। মানব ও মানবাত্মার অন্তিম যাত্রা ও চিরস্থায়ী গন্তব্যের মর্মস্পর্শী চিত্র ফুটে উঠেছে তাঁরই রচিত কবিতার মাঝে যা তাঁর অন্তিম শয়নস্থল ‘বাগে হোসাইনী’র এফিটাপ হিসেবে প্রতিনিয়ত আমাদের মনে শেষ গন্তব্য-বিষয়ে আত্মজিজ্ঞাসার জন্ম দেয়-
মানব প্রকৃতির কঠিন আকৃতি তোমার মদিরাপাত্র
সরস মাটির বিশাল দেহ তোমারই ফুলক্ষেত্র
কোলাহল পরিহারে নির্জনতার আসরে,
তোমারই প্রতীক্ষায় রহিয়াছি আজি তোমারই বাসরে।
লেখক: মুসলিম চ্যাপলেইন, এইচ.এম.পি.পি.এস. মিনিস্ট্রি অব জাস্টিজ, যুক্তরাষ্ট্র। রিসার্চ ফেলো, দারুল ইরফান রিসার্চ ইনস্টিটিউট (উওজও)