অচেনা বাংলাদেশ

4

আ,জ,ম,সামশুল হক

ছাত্র-ছাত্রীদের কোটা বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এবং পরবর্তীতে এক দফা আন্দোলনের ফলশ্রুতিতে শতাধিক ছাত্র-ছাত্রী, শিশু, জনতা, সাংবাদিক, পুলিশসহ অনেকে নিহত হয়েছেন। অগণিত লোক আহত হয়েছেন, অনেকে পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। নিহতদের বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং আহতদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। তাদের ত্যাগের মহিমায় বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে নবজাগরণ সৃষ্টি হয়েছে। অধিক সংখ্যক জনগণ সংস্কারের পক্ষে তথা পরিবর্তনের পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন। এখানে কৃতিত্ব কারো একার নয়, কোন দলের নয়, এককথায় ছাত্র-জনতার আন্দোলন। জনজোয়ারের মুখে বিগত সরকার পদত্যাগে বাধ্য হয়েছেন।
মাননীয় রাষ্টপতির আদেশক্রমে অধ্যাদেশ জারির মাধ্যমে দেশের প্রয়োজনে অন্তরবর্তী সরকার গঠন করা হয়েছে। যার নেতৃত্বে আছেন নোবেলজয়ী ড, মুহাম্মদ ইউনূছ। জনগণের আশা আকাঙ্খারপ্রতিফলন ঘটাতে পারবেন বলে সবাই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সরকার গঠন পরবর্তী কিছু সংখ্যক ছাত্র সমন্বয়কদের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন এবং তাদের অভিনন্দন জানিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য মতে,ছাত্ররাই মূল শক্তি। ছাত্র-ছাত্রীদের চাহিদার সাথে মিল রেখে তিনি অন্তরবর্তী সরকার পরিচালনা করবেন। এক পর্যায়ে বলেছেন,” তোমরা পাশে থাকলে আমার কাজ করতে সহজ হবে”। দুইজন সমন্বয়ক এর কথা বাদ দিলে তিনি অধিক শিক্ষিত ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন উপদেষ্টাদের সাথে নিয়ে অন্তরবর্তী সরকার গঠন করেছেন।
শুরুতে বলতে চাই,যারা আহত-নিহত হয়েছেন,তাদের পাশে থাকা, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে চিকিৎসা সেবা প্রদান করাসহ আর্থিক ও মানসিক সহায়তা অত্যধিক গুরুত্ববহ এবং জরুরী। জনগণ স্ব-স্ব অবস্থানে ফিরে যাওয়া,ছাত্র- ছাত্রীদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়া,দলবাজীর ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা,সর্বত্র শান্তি- শৃঙ্খলা বজায় রাখার স্বার্থে সবাইকে উজ্জীবিত করা এবং সচেতন করা এই সরকারের দায়িত্বে বর্তায়। আইনের শাসন ও সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য অধিক সময়ের প্রয়োজন। নির্বাচনকে প্রাধান্য দিতে গেলে কাজের সফলতায় বিঘ্ন ঘটবে এবং তাতে পরিবর্তন ফলদায়ক হবেনা।
দুর্নীতি রোধকল্পে অন্তরবর্তী সরকারকে কঠোর অবস্থানে থাকতে হবে।পুরাতনদের শাস্তির ব্যবস্থা করে নতুনদের আশ্রয় – প্রশ্রয় দেওয়া বা উৎসাহিত করা কোন অবস্থাতেই মঙ্গল বয়ে আনবেনা। দুর্নীতি এই দেশে চরম ব্যাধি এবং মহামারি আকার ধারনকরেছে। চাঁদা বাজির মূল উৎপাটন প্রয়োজন। মানুষ স্বস্তি এবং শান্তি চায়। পূর্ণ সংস্কারের অপেক্ষায় থাকবে জনগণ।
অন্তরবর্তী সরকারের কর্মযজ্ঞের পাশাপাশি একটি মহল শুরু থেকে সুকৌশলে রাজনৈতিক কার্যকলাপ এবং মিটিং মিছিল চালিয়ে যাচ্ছেন। বিদেশি প্রতিনিধিদের কাছে নিজেদের তুলে ধরে সাহায্যের আবেদন রেখে যাচ্ছেন। দ্রুততার সাথে নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার তাগিদ দিয়ে যাচ্ছেনএবং ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য দিয়ে চলেছেন।নির্বাচন উপযোগী গণতান্ত্রিক পরিবেশ ফিরে না আসা পর্যন্ত নির্বাচন হবে অর্থহীন। বিগত সরকারকে হটিয়ে নব্য ফ্যাসিস্ট এর আগমন ঘটুক বাংলাদেশের জনগণের কাম্য নয়।
বঙ্গবন্ধু – মুক্তিযুদ্ধ – বাংলাদেশ এক সূত্রে গাঁথা। অভিন্ন সত্তায় বেড়ে ওঠা বাংলাদেশ। অন্যের দায়ভার কোন ভাবেই বঙ্গবন্ধুর ওপর চাপানো যায়না। দেশে এবং আন্তর্জাতিকভাবে বঙ্গবন্ধুর অবস্থান অনেক ঊর্ধ্বে। তাঁর প্রতি অসম্মান প্রদর্শন করার অর্থ দেশকে অন্যের কাছে হেয় করা। রাজনীতিতে পালাবদলের সংস্কৃতি বাংলাদেশ জন্মের শুরু থেকে চলমান। রাজা যাবে এবং রাজা আসবে। পরিবর্তনশীল সমাজে কখন কাকে প্রয়োজন তা জনগণ প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্ধারণ করবে।
গণতান্ত্রিক এই দেশে সব দলের অংশ গ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়া সম্ভব। এই কঠিন কাজটি আমরা অন্তরবর্তী সরকারের কাছ থেকে প্রত্যাশা করি। আবেগ দিয়ে নয়, বাস্তবতার নিরিখে জাতির সামনে তুলে ধরা কল্যাণকর এবং সাধুবাদযোগ্য। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে।আমাদের শত কষ্টের মধ্যে ও আমরা তা ¤øান হতে দিতে পারিনা। পরিশেষে অন্তরবর্তী সরকারের কাছে আমাদের আবেদন, দেশে একটি স্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে যতটুকু সময়ের প্রয়োজন তা জনগণ নির্দ্বিধায় মানতে বাধ্য। দল জনগণের প্রয়োজনে। দল ছাড়াও ছাত্র জনতা বিপ্লব ঘটাতে পারে,তা আমাদের কাছে জ্বলন্ত উদাহরণ। জয় হোক জনতার।

লেখক : প্রাবন্ধিক