শুষ্ক মৌসুমে অগ্নিকান্ডের ঘটনা বৃদ্ধি পায়। অগ্নিকান্ডের কারণ অনুসন্ধান করে জানা যায়, ব্যক্তির অসতর্কতা, বৈদ্যুতিক শটসার্কিট, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণ, নাশকতা ইত্যাদি কারণেই দেশে অগ্নিকাÐের ঘটনা ঘটে। সকল অগ্নিকান্ডের কারণের সাথে ব্যক্তির সম্পৃক্ততা থাকে। তাই অগ্নি দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। দৈনিক পূর্বদেশের এক প্রতিবেদনে বলুয়ারদীঘি এলাকায় কলোনিতে আগুন লেগে ধোঁয়ায় দমবন্ধ হয়ে ২জনের অপমৃত্যু হয়েছে। আরেক প্রতিবেদনে ফটিকছড়িতে ৬ দোকান পোড়ে ছাই হওয়ার খবর পাওয়া যায়। ব্যক্তি ও সমাজের মানুষ সচেতন থাকলে এমন ভয়াবহ অগ্নি দুর্ঘটনা হতে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। নগরীতে আগুনের ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছেন আরও তিনজন। গতকাল সোমবার সকাল পৌঁনে ৭টায় কোতোয়ালী থানাধীন ভলুয়ারদীঘির পশ্চিমপাড় এলাকায় জাফর সওদাগর কলোনিতে এ আগুন লাগে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে এক ঘণ্টার বেশি সময় চেষ্টা চালিয়ে সকাল ৮টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে পাঁচটি কাঁচাঘর পুড়ে গেছে। নিহতরা হলেন মো. ইলিয়াছ (৫০) ও ফারভিন আক্তার (৪৫)। আহতরা হলেন ফয়সাল (১৯), সোহান (১৯) ও শাহীনা আক্তার (২৩)। তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মূলত আগুন লাগে হাজী জাফর সওদাগর কলোনিতে অ্যাডভোকেট মকসুদ মিয়া নামে একজনের মালিকানাধীন টিনশেড সারিবদ্ধ ভাড়াঘরে। সেখানে পাঁচটি ঘর পুড়ে গেছে। তবে এসব বসতঘরের বাসিন্দাদের কারও ক্ষতি হয়নি। সবাই নির্বিঘ্নে বসতঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতে সক্ষম হন। যে পাঁচ জনকে অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়, তারা ওই টিনশেড বসতঘর সংলগ্ন সেমিপাকা একটি ভাড়াঘরের বাসিন্দা। সেই বসতঘরে আগুন লাগেনি। তবে টিনশেড ঘরে লাগা আগুনের ধোঁয়ার কুন্ডলি প্রবেশ করে সেমিপাকা কয়েকটি বসতঘরে। স্থানীয়রা জানান, টিনশেড ঘরে আগুন লাগার পর সেমিপাকা ঘরগুলোর বাসিন্দারাও প্রায় সবাই বেরিয়ে রাস্তায় চলে যান। কিন্তু আগুন নিভিয়ে ফায়ার সার্ভিসের টিম ঘটনাস্থল ছাড়ার আগমুহূর্তে জানা যায়, একটি সেমিপাকা ঘরের বাথরুমে পাঁচজন আটকে আছেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা তাদের উদ্ধার করেন। ফায়ার সার্ভিসের এক কর্মকর্তার বরাতে জানা যায়- ‘আগুনের ধোঁয়া থেকে বাঁচতে সম্ভবত পাঁচজন একসঙ্গে একই বাথরুমে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানে পানি ছিল। সম্ভবত নিজেদের রক্ষা করতে পারবেন ভেবেছিলেন। আমরা তাদের অজ্ঞান অবস্থায় উদ্ধার করি। যদি ঘর ছেড়ে বেরিয়ে যেতেন, তাহলে শ্বাসরোধ হতো না।’ চন্দনপুরা ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার বলেন, ‘নগরীর কোতোয়ালি থানাধীন ভলুয়ারদীঘির পশ্চিম পাড়ে জাফর সওদাগর কলোনির পাঁচটি কাঁচাঘরে অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ওই পাঁচটি ঘর ও ঘরের মালামাল আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আগুন লাগার কারণে পাঁচ জন সদস্য ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে আহত হয়। তাদের উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক দুই জনকে মৃত ঘোষণা করেন। বর্তমানে তিনজন হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগে চিকিৎসাধীন আছেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের স‚ত্রপাত হয়েছে।’ ঘটনাস্থলে থাকা ফায়ার সার্ভিসের চট্টগ্রামের উপ-সহকারী পরিচালক আব্দুল মান্নান বলেন, ‘বস্তির মতো একটি কলোনিতে আগুন লাগে। ভুবই ঘনবসতিপূর্ণ ও ঘিঞ্জি এলাকা। অবশ্য আমাদের পৌঁছাতে এবং আগুন নেভানোর কাজ করতে সমস্যা হয়নি। আগুনে ৫টি বসতঘর পুড়েছে। সামনের আরেকটি বসতঘরে থাকা পাঁচজন ধোঁয়ায় শ্বাসরোধ হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাদের আমরা উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাই। সেখানে দুই জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। তিন জন বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডা. রফিক উদ্দিন আহমেদ জানান, ‘আগুনের ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। আহত তিনজনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আগুনের ধোঁয়ায় তাদের শ্বাসনালি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চিকিৎসা চলমান আছে।’ পূর্বদেশের আরেক প্রতিদেন হতে জানা যায়, ফটিকছড়ি উপজেলার ভ‚জপুর থানাধীন কাজিরহাট বাজারে আগুনে ৬টি দোকান পুড়ে ছাঁই হয়ে গেছে। গতকাল সোমবার বিকাল ৪ টার দিকে এ অগ্নিকান্ডের ঘটনা ঘটে। এতে ব্যবসায়ীদের প্রায় কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কাজিরহাট বাজারের দক্ষিণ দিকে আবুল কাসেমের তেলের দোকান, মো. বেলালের ফুলের দোকান, মো. ইদ্রিছের মুদির দোকান, মো. ইলিয়াছের বাইসাইকেলের দোকান, অসিম দত্তের হার্ডওয়্যারের দোকান ও মো. সেলিমের মোবাইলের দোকান আগুনে পুড়ে যায়। সংবাদ পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের টিম ঘটনাস্থলে গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। স্থানীয় ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন বাচ্চু বলেন, আগুন লাগার পর আশেপাশের ব্যবসায়ী ও পথচারীরা আগুন নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। পরে ফায়ার সার্ভিসের টিম গিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে প্রায় কোটি টাকা ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্ত দোকান মালিকদের।
ফটিকছড়ি ফায়ার সার্ভিসের টিম লিডার (ভারপ্রাপ্ত) বলেন, খবর পেয়ে দ্রুত অগ্নিকান্ডস্থলে গিয়ে চেষ্টা চালিয়ে আমরা আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হই। ততক্ষণে দোকানগুলো পুড়ে যায়। গত ৫ ফেব্রুয়ারি একই বাজারে আগুনে ১২টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান পুড়ে প্রায় ২ কোটি টাকার ক্ষয়-ক্ষতি হয়। একমাত্র সার্বিক জনসচেতনতাই পারে অগ্নিকান্ডের ক্ষয়ক্ষতি হতে জানমাল রক্ষা করতে।