অগ্নিঝরা মার্চ

2

নিজস্ব প্রতিবেদক

একাত্তরে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রাক্কালে ২২ মার্চ ছিল লাগাতার অসহযোগ আন্দোলনের ২১তম দিবস। স্বাধীনতার দাবিতে বিক্ষুব্ধ মানুষের সভা-সমাবেশ, শোভাযাত্রা ও গগনবিদারী স্লোগানে তখন ঢাকার আকাশ-বাতাস মুখরিত। এদিন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান ২৫ মার্চ ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় পরিষদের অধিবেশন স্থগিত ঘোষণা করেন। অজুহাত হিসেবে পাকিস্তানের উভয় অংশের রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ‘ঐকমত্যের পরিবেশ স¤প্রসারণের সুযোগ সৃষ্টির’ কথা বলেন ইয়াহিয়া।
প্রেসিডেন্ট ভবনে এদিন সকালে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও জুলফিকার আলী ভুট্টো বৈঠক করেন। সোয়া এক ঘণ্টার বৈঠক শেষে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে নিজের বাসভবনে ফিরে বঙ্গবন্ধু সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের আন্দোলন চলছে। লক্ষ্য অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
এদিকে দুপুরে প্রেসিডেন্ট ভবন থেকে কড়া সামরিক পাহারায় হোটেলে ফিরে ভুট্টো তার উপদেষ্টাদের নিয়ে বৈঠকে বসেন। ভুট্টো ফেরার সময় হোটেলের বাইরে ভুট্টো-বিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষুব্ধরা। সাংবাদিকদের ভুট্টো-বিরোধীদের অবস্থানের ছবি ও খবর সংগ্রহ করার একটি আলোকচিত্র পরদিন ইত্তেফাকের প্রথম পাতায় প্রকাশিত হয়। ভুট্টোর নেতৃত্বে পিপলস পার্টির নেতারা সন্ধ্যায় প্রেসিডেন্ট ভবনে যান। রাতে সেখান থেকে ফিরে ভুট্টো হোটেল লাউঞ্জে সংবাদ সম্মেলন করেন। ভুট্টো বলেন, প্রেসিডেন্ট এবং আওয়ামী লীগ প্রধান বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে একটি সাধারণ ঐকমত্যে পৌঁছেছেন। তবে ওই ঐকমত্য অবশ্যই পিপলস পার্টির কাছে গ্রহণযোগ্য হতে হবে। পিপলস পার্টির অনুমোদন ছাড়া কোনো সিদ্ধান্ত পশ্চিম পাকিস্তানিরা মেনে নিতে পারে না।
এদিন বায়তুল মোকাররম প্রাঙ্গণে সশস্ত্র বাহিনীর সাবেক বাঙালি সৈনিকেরা সমাবেশ ও কুচকাওয়াজ করেন। তারা বলেন, বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের জন্য যে অভ‚তপূর্ব ঐক্য গড়ে উঠেছে, তাতে তারা আর প্রাক্তন হিসেবে বসে থাকতে পারেন না।