অগ্নিঝরা মার্চ

1

নিজস্ব প্রতিবেদক

নানা কারণে একাত্তরের ২০ মার্চ ছিলো ঘটনাবহুল ও উত্তেজনাপূর্ণ। সারাদেশেই উত্তপ্ত পরিবেশ বিরাজমান। পথে নেমে আসে ক্ষুব্ধ বাঙালিরা। যুদ্ধের প্রস্তুতি চলতে থাকে দেশজুড়ে। বঙ্গবন্ধু এক বিবৃতি দিয়ে ২৩ মার্চ লাহোর প্রস্তাব উপলক্ষে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেন। এদিন মিরপুর, চট্টগ্রাম, পার্বতীপুর ও সৈয়দপুরে বিহারী ও পাক সেনাদের সঙ্গে বাঙালীর তুমুল সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আহত হয় অর্ধশতাধিক।
এদিকে লাগাতার চলা অসহযোগ আন্দোলনের ছিল ১৯তম দিন। আজও রাজধানীর সব সরকারি-বেসরকারি বাসভবন এবং যানবাহনসমূহে কালো পতাকা উড়ছে। আগের দিনের পর আজ সকাল দশটায় প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর ৪র্থ দফা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এবারের আলোচনায় বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দলীয় ৬ জন শীর্ষস্থানীয় সহকর্মী ছিলেন। তারা হচ্ছেন সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ, ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলী, এএইচএম কামারুজ্জামান, খোন্দকার মোশতাক আহমেদ এবং ড. কামাল হোসেন। পক্ষান্তরে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সহকর্মী ৩ জন ছিলেন যথাক্রমে বিচারপতি এআর কর্নেলিয়াস, লে. জেনারেল পীরজাদা ও কর্নেল হাসান। আজকের আলোচনা প্রায় সোয়া দুই ঘণ্টা স্থায়ী হয়। সমগ্র পাকিস্তানসহ বিশ্ব নেতৃবৃন্দ ও সংবাদ মাধ্যমসমূহের দৃষ্টি তখন এ আলোচনার দিকে। দেশবাসীও অধীর আগ্রহে।
আলোচনা শেষে প্রেসিডেন্ট ভবন হতে বঙ্গবন্ধু বের হয়ে এলে জনতা ‘জয় বাংলা’ ¯েøাগানে তাকে স্বাগত জানায়। পরে ধানমন্ডির বাসভবনে ফিরে দেশি-বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে আলোচনাকালে বঙ্গবন্ধু বলেন, আমাদের আলোচনা অব্যাহত আছে। আলোচনায় কিছুটা অগ্রগতি হয়েছে। আগামীকাল পুনরায় প্রেসিডেন্টের সঙ্গে আলোচনায় বসব। ইতোমধ্যে আমার উপদেষ্টাগণ প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টাদের সঙ্গে সময় ঠিক করে মিলিত হবেন।
প্রতিদিনের মতো আজও রাজধানীর বিভিন্ন স্থান হতে বিপুল জনতা শোভাযাত্রা সহকারে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে সমবেত হয়। প্রতিটি শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণকারীদের উদ্দেশে একের পর এক সংক্ষিপ্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধু বলেন, বাংলার জনগণের সার্বিক মুক্তি না হওয়া পর্যন্ত সত্যাগ্রহ চলবে। আন্দোলনে ভাটা পড়তে দেবেন না। সংগ্রামে শৈথিল্য আসলে শত্রæপক্ষই শক্তিশালী হবে। আমার আর কিছুই পাওয়ার নেই, যা আমি পেয়েছি এর কোনও তুলনা নেই। বাংলার মানুষের এই বিশ্বাস ভালবাসা নিয়েই আমি মরতে চাই। আর তার আগে বাংলার মানুষের মুক্তি চাই। যত বাধাই আসুক এই লক্ষ্য অর্জনের সংগ্রাম অব্যাহত থাকবে।
অথচ এরমধ্যেই অতর্কিতে অপারেশন সার্চ লাইট পরিকল্পনায় বিভোর জেনারেল ইয়াহিয়া খান। এদিন তিনি সামরিক উপদেষ্টা জেনারেল হামিদ খান, টিক্কা খান, জেনারেল পীরজাদা, জেনারেল ওমর প্রমুখকে নিয়ে ঢাকা ক্যান্টনমেন্টে সামরিক প্রস্তুতির পূর্ণ রূপ দেন। অন্যদিকে প্রতিদিনই ছয় থেকে ১৭টি পর্যন্ত ফ্লাইটে পাকিস্তান থেকে সেনা ও যুদ্ধের রসদ আনা হচ্ছিল পূর্ব পাকিস্তানে। স্থল ও বিমান বাহিনীর শক্তি দ্বিগুণ করা হয়।