মনিরুল ইসলাম মুন্না
নগরীর সিডিএ এভিনিউতে রাস্তায় খানাখন্দ, গ্যাসের লাইন, ওয়াসার লাইন সংস্কারসহ নানা কারণে যানজট লেগে থাকা এখন প্রতিদিনের চিত্র। এর বাইরে স্থানীয় ট্রাফিক পুলিশকে ম্যানেজ করে অক্সিজেন এলাকায় রুট পারমিট শেষ হওয়া বাসগুলো মুরাদপুর এসে যাত্রী উঠানামা করিয়ে নতুন জটলা তৈরি করছে। ফলে নিত্য যানজটে দুর্ভোগ তৈরি হচ্ছে পুরো সড়কটিতে। গত কয়েকদিন ধরে ওই এলাকায় অবস্থানকালে এমন দৃশ্যের দেখা মেলে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ (সিএমপি) ট্রাফিক উত্তর বিভাগের উপ-কমিশনার জয়নুল আবেদীন (অতিরিক্ত ডিআইজি) বলেন, যেসব গাড়ির রুট পারমিট অক্সিজেন এলাকায় শেষ, সেগুলো মুরাদপুরের দিকে আসার সুযোগ নেই। আমি বিষয়টি দেখছি। সেখানে কোন ট্রাফিকের সাথে আঁতাত করার সুযোগ নেই। আর লোকাল টিআই (ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক) যদি এমন করে থাকে, তাহলে ওই টিআই দায়বদ্ধ হবে। আমাদের পক্ষ থেকে মূল সড়কে রুট পারমিটবিহীন বা অবৈধ গাড়ি পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এসব গাড়ির বিরুদ্ধে হার্ডলাইনে আছি, ভবিষ্যতেও থাকবো।
জানা গেছে, মুরাদপুরের হাটহাজারী সড়কে যাত্রী উঠানামা, ইউটার্ন, মূল সড়কে বাস পার্কিংসহ নানা কারণে যানজট এখন প্রতিদিনের চিত্র। স্থানীয়রাও এসব নিয়ে ক্ষোভ ঝাড়ছেন ট্রাফিক বিভাগের প্রতি। তাদের মতে, ট্রাফিক যদি চায়, একটা সুষ্ঠু ব্যবস্থায় আনতে পারে।
স্থানীয় দোকানি আবুল কালাম বলেন, ফটিকছড়ি, খাগড়াছড়ির বাসগুলো এখানে দাঁড়াবে কেন? মুরাদপুর মোড় কী বাসস্ট্যান্ড? অক্সিজেন পর্যন্ত যেহেতু গাড়িগুলোর অনুমোদন আছে, সেগুলো ওইদিকে একপাশে দাঁড়িয়ে যাত্রী উঠানামা করাতে পারে। এখানে কেন সাধারণ মানুষের ভোগান্তি তৈরি করছে? আসলে এখানে (মুরাদপুর মোড়ে) যতক্ষণ ট্রাফিক পুলিশ দাঁড়িয়ে থাকেন, ততক্ষণ কোনো যানজট থাকে না। একটু সরে গেলে সব যানবাহন একসাথে জটলা লাগায়। অনেক সময় আমরা হাঁটা-চলা পর্যন্ত করতে পারি না।
সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে নাজিরহাট পর্যন্ত ৪০টি, ফটিকছড়ি পর্যন্ত ৩০টি, রামগড় পর্যন্ত ২০টি এবং খাগড়াছড়ি পর্যন্ত ৮০টি বাসসহ ১৭০টি বাস নিয়মিত যাতায়াত করে। আর এসব বাসগুলোর মধ্যে শতাধিক বাসে যাত্রী উঠানামা করে মুরাদপুর এলাকা থেকে।
সরেজমিন দেখা গেছে, মুরাদপুর মোড়ের রফিক বিল্ডিং’র সামনে দাঁড়িয়ে ছিল ‘এইচ শাহজাহান শাহ’ নামের একটি বাস। যেটিতে ‘ফটিকছড়ি-চট্টগ্রাম, হেয়াকো-চট্টগ্রাম’ সাইনবোর্ড ছিল। বাসটি ওইদিক থেকে আসাতে যাত্রী নামিয়ে দিচ্ছেন। আর গাড়িটি পার্কিং করেছে মূল সড়কের উপর। ওই বাসের কারণে পেছনের অন্যান্য যানবাহন সামনে এগুতে পারছিলো না। ১০ মিনিট ধরে অবস্থান করার পর বাসটি এগিয়ে যেতে থাকে, ততক্ষণে পেছনের যানবাহনের সারি এক কিলোমিটার পর্যন্ত হয়ে যায়।
ফটিকছড়ি থেকে আসা যাত্রী ওয়ারেস উদ্দিন বলেন, অক্সিজেনে যখন বাসটি আসে, তখন আমাদেরকে সুপারভাইজার বলেছে, বাস মুরাদপুর পর্যন্ত যাবে। আপনারা যদি মুরাদপুর নামেন, তাহলে বসেন। সেজন্য এখানে এসে নেমেছি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাস হেলপার বলেন, আসলে আমাদের রুট পারমিট অক্সিজেন পর্যন্ত হলেও যাত্রী মুরাদপুর পর্যন্ত পাওয়া গেলে, চলে আসতে পারি। এখান থেকে আগে গাড়ি চলাচল করতো, তাই এখানে যাত্রীর সংখ্যাও ভাল পাওয়া যায়। ইনকামও ভালো হয়।
ট্রাফিক পুলিশ সমস্যা করে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের নেতারা ট্রাফিক পুলিশ, সার্জেন্টসহ সবাইকে ম্যানেজ করে ফেলছে। তাই কোন সমস্যা করে না। আমরা ইনকাম থেকে সমিতিকে দিয়ে দিই। সমিতি তাদেরকে দেন।
চট্টগ্রাম নাজিরহাট বাস মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. জাফর বলেন, ‘শান্তি পরিবহনের বাসগুলো অক্সিজেন পর্যন্ত যাত্রী উঠানামা করায়। ফটিকছড়ির কিছু বাস মুরাদপুর পর্যন্ত যায়, তবে সেগুলো যাত্রীদের অনুরোধে। পুলিশ ম্যানেজ করার বিষয়টি আমি জানি না। আমান নামে এক গাড়ির মালিক আছেন, তিনিই এসব করেন। যদিও আমান আমাদের সমিতির কোন সদস্য না। এমনি গাড়ির মালিক। উনার সাথে টিআই-সার্জেন্টদের সখ্যতা থাকায় এসব করতে পারেন।
এ ব্যাপারে কথা বলার জন্য আমানের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে ফোনে পাওয়া যায়নি।
মুরাদপুরের দায়িত্বরত ট্রাফিক পরিদর্শক (টিআই) আলতাফ হোসেন পূর্বদেশকে বলেন, ‘আসলে চালক হেলপাররা একটু বাড়িয়ে বলে। আমার সাথে অনেকে দেখা করতে আসেন। আমি তাদেরকে বলেছি- আপনাদের গাড়িতে যদি এদিকে চলাচলের অনুমতি থাকে, তবে চলাচল করেন। আর না থাকলে নেই। কিন্তু এর বাইরে আর্থিক কোন সম্পর্ক তাদের সাথে নেই। আমি ছুটি থেকে আসলে বিষয়টি নজর দিবো।’