অক্টোবরে ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রকোপের আশঙ্কা

2

দেশজুড়ে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বেড়েই চলেছে। এরই মধ্যে চলতি বছরে মৃত্যুর সংখ্যা ২০০ অতিক্রম করেছে। ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ৫০ হাজার ছুঁই ছুঁই। থেমে থেমে রোদ ও বৃষ্টির এমন আবহাওয়া এডিস মশার বংশ বিস্তারে উপযুক্ত। পাশাপাশি পূজোর ছুটিতে বাসাবাড়ি, অফিসে বংশবিস্তারের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ফলে চলতি অক্টোবর মাসে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে সারাদেশে ৩৭৪ জন ডেঙ্গুরোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। চলতি বছরের ৪ অক্টোবর পর্যন্ত মোট ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে ৪৮ হাজার ৮৬৫ জন এবং মোট ২০৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। খবর বাংলানিউজের
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য মতে, সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গু ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ১৫ হাজার ৮৬৬ জন এবং মারা গেছেন ৭৬ জন। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরেই মোট রোগীর ৩৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে। আক্রান্ত ও মৃত্যুর উভয় দিক থেকেই সেপ্টেবর মাস চলতি বছরে আগের সব মাসকে ছাড়িয়ে গেছে।
চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন এক হাজার ১৬১ জন এবং মারা যান ১০ জন। ফেব্রæয়ারিতে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩৭৪ জন এবং মারা যান তিন জন। মার্চ মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৩৩৬ জন। এপ্রিলে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ৭০১ জন এবং সাত জন মারা যান। মে মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন এক হাজার ৭৭৩ জন এবং মারা যান তিন জন। জুন মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন পাঁচ হাজার ৯৫১ জন এবং মারা যান ১৯ জন। জুলাই মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ১০ হাজার ৬৮৪ জন এবং মারা যান ৪১ জন। আগস্ট মাসে ডেঙ্গু আক্রান্ত হন ১০ হাজার ৪৯৬ জন এবং মারা যান ৩৯ জন।
ডেঙ্গুর ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতার ফলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনায় দেশের সব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং বিশেষায়িত হাসপাতালের পরিচালক, জেলা সদর হাসপাতালের তত্ত¡াবধায়ক, সিভিল সার্জন, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাকে জরুরি ১২ নির্দেশনা প্রদান করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, থেমে থেমে বৃষ্টি হওয়ার কারণে সহজেই বিভিন্ন পাত্রে পানি জমে ডেঙ্গুর বংশ বিস্তারের উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়। বাসা বাড়ির ছাদে কিংবা বেজমেন্টে, সড়কে, বাড়ির আনাচে কানাচে পড়ে থাকা পলিথিন, প্লাস্টিকের পাত্র, ডাবের খোসাসহ বিভিন্ন পাত্রে যে পানি জমে সেসব জায়গা থেকে এডিস মশার বংশ বিস্তার হচ্ছে। ফলে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা এবং মৃত্যু বাড়ছে। বর্তমানে ডেঙ্গুর প্রকোপ প্রসঙ্গে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, ডেঙ্গুর প্রকোপ চলমান আছে। বৃষ্টি থেমে যাওয়ার পর আরও দুই মাস আমাদেরকে ডেঙ্গুর ধকল পোহাতে হবে। এখন বৃষ্টি হচ্ছে, আবার রোদও আছে, এমন হলে ডেঙ্গু উৎপাদন হতেই থাকবে। ফলে এখন যে ডেঙ্গু পরিস্থিতি আছে, সেটা কমার লক্ষণ নেই, বরং বাড়ার আশঙ্কা আছে।
বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতি বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগরবিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক এবং কীটতত্ত¡বিদ ড. কবিরুল বাশার বাংলানিউজকে বলেন, কাল অথবা পরশু থেকে ডেঙ্গু বেড়ে যাবে। অনান্য বছর যেমন নভেম্বর ডিসেম্বরে ডেঙ্গু রোগী অনেক কমে যায়, সেটা এ বছর হবে না। চলতি মৌসুমের ডেঙ্গু আগামী বছরের জানুয়ারি পর্যন্ত বেশ ভালো থাকবে। তিনি আরও বলেন, আমার মনে হচ্ছে আগামী কয়েকদিনের মধ্যেই ডেঙ্গু প্রকট আকার ধারণ করবে। কারণ পূজার ছুটির একটা বিষয় আছে, দীর্ঘ সময় ছুটি ছিল। সব বন্ধ থাকার কারণে বৃষ্টির মধ্যে এডিস মশা জন্মানোর সুযোগ পেয়েছে। ছুটির পর মানুষ যখন ফিরবে তখন সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। সর্বোচ্চ সংক্রমণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহের ৭-৮ তারিখ কিংবা ১৫ তারিখ থেকে পিকে ওঠা শুরু করবে এবং সেটা নভেম্বরে গিয়ে ঠেকবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, জনগণকে সম্পৃক্ত করে, স্বেচ্ছাসেবকের সমন্বয়ে পরিষ্কার পরিছন্নতার জন্য যেভাবে কাজ করা দরকার, সরকার সেই দিকে যাচ্ছে না। গতানুগতিক পন্থায় কিছু রাসায়নিক ধোঁয়া দেওয়া হচ্ছে। ধোঁয়া নির্ভর মশা নিয়ন্ত্রণ কোনো দেশে কখনও সফল হয় না। কিছু মশা নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে, আবার বাড়ছে, এভাবে পরিস্থিতির উন্নতি হবে না। মশা নিয়ন্ত্রণে আমাদের সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।